দিপংকর বনিক দিপু ,দিরাই(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
পেশায় তিনি একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন বয়স আশি বছর ছুঁইছুঁই করছে।লিখছি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার কচুয়া গ্রামের নাম নগেন্দ্র চন্দ্র দাস,উনার ছবি তোলতে অনিহা প্রকাশ করেন বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে-চলতে পারেন না। তারপরেও মনের শক্তিতে হেঁটে চলেন তিনি। বয়সে বৃদ্ধ নয় মনের দুর্বলতায় বৃদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় বলে অভিমত তার। আর তাই তো ছাপা পত্রিকা পড়েই তিনি মনকে শক্ত রেখে এখনও দিব্যি সুস্থ রয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। তবে অনেক দিন ধরে ছাপা পত্রিকা হাতে না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন তিনি। নগেন্দ্র বাবুর দুই মেয়ে এক ছেলে মেয়ে দুজনের বিয়ে হয়েগেছে, ছেলেটি একটি বেসরকারি এনজিওতে চাকুরী সুবাদে বাড়ির বাহিরে থাকতে হয়।ছেলে মাসেমাসে টাকা পয়সাও পাঁঠায়, এখন বৃদ্ধ দুইজন অসহায়ের মত দিনযাপন করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন নিজেই মাঝেমধ্যে হাটবাজারে যাই ছাপা পত্রিকার আশায় কিন্তু পত্রিকা আর খুঁজে না পেয়েই বাড়ি ফিরতে হয়।
এই ৮০বছর বৃদ্ধ বয়সী নগেন্দ্র চন্দ্র দাস গণমাধ্যম কে বলেন, অবসর জীবন একটা বিব্রতকর জীবন। এ বয়সে কোন ধারাবাহিক কাজ নেই। সময় যেন কাটতে চায় না। এই বিব্রতকর নিঃসঙ্গ জীবনে অনেকটাই শান্তির পরশ বয়ে দেয় পত্রিকা। পত্রিকা পড়লে মনটা বেশ ভালো হয়ে যায়। প্রতিদিন পত্রিকা না পড়লে পাগলের মতো লাগে। ঘুম থেকে জেগেই অপেক্ষায় থাকি পত্রিকার।
অনলাইন পত্রিকার গুরুত্ব তুলে ধরে অমলেন্দু বলেন, বয়সের ভারে আমি ডিজিটাল কোন ডিভাইস ব্যবহার করতে হয় তা পারি না। তবে যে যুগ আসছে তাতে আগামী প্রজন্মকে অনলাইনের ওপর নির্ভর হতে হবে। ঘটনার সাথে সাথেই খবর জানা যায় অনলাইনে। যদি অনলাইন পত্রিকা ব্যবহার করতে পারতাম তাহলে আরও ভালো লাগত। জানি না অনলাইন ব্যবহার করার সুযোগ পাবো কিনা? তবে চেষ্টা চালাব।
পত্রিকাপ্রেমীরা পত্রিকা পাচ্ছে না তা জানতে কথা হলে হকার ঝন্টু বর্মন জানানয়। আমার অসহায় পরিবারের চার সদস্য নিয়ে বাস করি দিরাই উপজেলা ইউনিয়নের চাঁন্দপুর গ্রামে। সকালে বাসায় বাসায় পত্রিকা বিলি করতাম, বাকি সময় রাস্তার মোড়ে ও রাস্তায় রাস্তায় হেটে পত্রিকা বিক্রি করে যে টাকা পান তা দিয়ে কষ্টে দিন চলে পরিবারের।
হকার ঝন্টু বর্মন আরও জানান, প্রতিদিন ছোট বড় মিলে ১৫০ পিছ পত্রিকা আসতো এর মধ্যে ৩০/৩৫ পিছ পত্রিকা বিক্রি করে অবশিষ্ট থাকতো কিন্তু সেই পত্রিকা ফেরত নিতেন না মালিক পক্ষ। যার ফলে প্রতিমাসে প্রায় ৩০০০ টাকার মত লছ দিতে হয়। সেই সাথে প্রতিমাসে ২০০০ টাকা গাড়ী ভাড়া দিতে হয়। পত্রিকা বিক্রি করে ৩০% কমিশন পাই তা দিয়ে কি করে নিজের খরচ মিটাই।
তাই প্রতিমাসে মহাজনের টাকা পুরোপুরি দিতে পারি না, অল্প অল্প করে মহাজনের এখন প্রায় দেড় লক্ষ টাকা পাওনা হয়েগেছে। ৫ টাকার পত্রিকা এখন ৭ টাকা ১০ টাকার পত্রিকা এখন ১২ টাকা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এখন পত্রিকা কিনতে চায় না, এমনকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসেও পত্রিকা রাখেনা। মহাজনের বকেয়া টাকাও দিতে পারছি না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে পারিবারকে বাঁচাতে রাস্তায় আমড়া বেচতে বের হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে পত্রিকা এজেন্ডের সাথে কথা হলে সৈয়দ সাইফুল ইসলাম নাহেদ জানান করোনা ও বন্যার পর থেকে পত্রিকার বাজারে ধস নেমেছে। আগের চেয়ে এখন কাগজের দাম বেশি বেড়েছে আগের মত পত্রিকা মালিকরা অবশিষ্ট নিচ্ছে না তাই পত্রিকার বাজারেও ধস নেমেছে। পত্রিকা প্রেমিরা পত্রিকা পাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে নাহেদ জানান বলেন, গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে হলেও পত্রিকা পাঠানোর যেতে পারে ,কিন্তু মালিক পক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :