অভয়নগরে ব‍্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে মাদকদ্রব‍্য , ধবংস হচ্ছে যুব সমাজ


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৭, ২০২২, ৮:৫১ পূর্বাহ্ন / ৩৯৫
অভয়নগরে ব‍্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে মাদকদ্রব‍্য , ধবংস হচ্ছে যুব সমাজ

মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি

যশোরের অভয়নগরে মাদকের নীল ছোবলে ধবংস হচ্ছে যুব সমাজ। দিন দিন এর প্রভাব ব‍্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিতে -গলিতে। প্রতিনিয়ত আনাচে -কানাচে বিক্রি হচ্ছে মাদক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সমস্ত মাদক দ্রব‍্যের মধ্যে রয়েছে, বাংলা মদ, গাঁজা,ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ভারতীয় নামিদামী ব্রান্ডের আরো অনেক নাম- নাজানা মাদক । রকমারী মাদকের প্রতি তরুণদের আসক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বিধবংসকারী মাদকের বিস্তার সমাজে যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সচেতন অভিভাবক মহল উদ্ধিগ্ন। মাদকাসক্ত সন্তানের কারনে এক একটি পরিবার ধবংস হয়ে যাচ্ছে। মাদকাসক্ত সন্তানকে নিয়ে পরিবার গুলো দিশেহারা হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণামতে দেখা যায়, স্কুল -কলেজের শিক্ষার্থীরা ও মাদকাসক্ত হচ্ছে। যত্রতত্র চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। প্রতিনিয়ত রয়েছে নেশার আড্ডা, এর চাহিদা মেটাতে তরুণ -তরুণীরা ক্রমেই নেমে পড়েছে অপরাধ জগতে। অনেক শিক্ষার্থী নেশার মোহে পড়ে সম্ভাবনাময় জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ‍্যে ঠেলে দিচ্ছে। ।মাদক হচ্ছে সকল অকল‍্যাণ ও অমঙ্গলের প্রধান উৎস। মাদকের নীল নেশায় ক্ষয়ে যাচ্ছে আমাদের তারুণ্য। মাদকতার গহীন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে যুবসমাজ। মাদক সেবনকারীরা মানবরূপী নরপশুতে পরিনত হচ্ছে। মাদকদ্রব‍্য সেবন করে তার মোহিনী নেশায় বিভোর হয়ে কলঙ্কের প্রতীক হয়ে নির্দ্ধিধায় দিনাতিপাত করছে। বর্তমানে মাদক সেবন যেন একটি সামাজিক রীতি-নীতিতে এমনকি আধুনিকতায় রূপ নিয়েছে। নাবাল বৃদ্ধবনিতা সকলেই মাদকতার বিষাক্ত প্রেমে আসক্ত। ইহা সেবন করে মাতলামির শেষপ্রান্তে পৌঁছে স্বীয় কান্ডজ্ঞান বিবেক বুদ্ধিকে খুইয়ে তার মাতা-পিতা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে প্রতিনিয়ত অশালীন আচরণ করছে। এমনও খবর পাওয়া গেছে, মাদক সেবনকারিরা পিতা-মাতাকে করছে শারীরিক ও মানসিক ভাবে লাঞ্ছিত। লোক লজ্জার ভয়ে অনেক পিতা- মাতা নীরবে তা সহ‍্য করে যাচ্ছে। এসমস্ত মানবরূপী দানবেরা স্বীয় গৌরব ও কৃষ্টি কালচারকে ভুলতে বসেছে। সভ‍্য নামের নোংরামি অসভ‍্যতা আজ মানব সমাজকে ধবংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। তথ‍্যানুসন্ধানে জানাগেছে, অভয়নগর উপজেলার গাজীপুর,রাজঘাট,প্রফে­সরপাড়া,ধোপাদী,ড্রাইভ­ারপাড়া, বনগ্রাম,সুন্দলী, সরদার মিল, ভাঙ্গাগেট, চেঙ্গুটিয়া, প্রেমবাগ, ভৈরব ব্রীজের আশেপাশে, দেয়াপাড়া,শংকরপাশা, কোদলা, মথুরাপুর,রাঙ্গারহাট,­হরিশপুর,পাঁচুড়িয়া, বাঘুটিয়া,সিংগাড়ী,গোপ­িনাথপুর, সিদ্দিপাশাসহ বিভিন্ন প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে এখন বকাটে যুবকেরা মাদক সেবনসহ তা বিক্রি ও করছে। এসব এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত দেখা যায় বকাটে যুবকদের আনাগোনা। এরা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরো অভিযোগ উঠেছে যে, বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব‍্যবসায়ীরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ছত্রছাঁয়ায় থেকে বুক ফুলিয়ে দেদারসে করে যাচ্ছে মাদক ব‍্যবসা। ”পুলিশ -প্রশাসন” এর নাড়ি নক্ষত্রের সব খবরাখবর জানেন অথচ কেনযে নীরব ভূমিকা পালন করছেন তা বোধগম্য নয়। মাদক সম্রাটরা থেকে যাচ্ছে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বর্তমানে মাদক ব‍্যবসায়ি ও মাদক সেবীর তালিকা দিনে দিনে দীর্ঘ হচ্ছে, কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছেনা এ অবৈধ মাদক কারবার। ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুবসমাজ। অভয়নগরে মাদকের বিস্তৃতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তরুণ ও যুবসমাজ ব‍্যাপকহারে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।বর্তমান সমাজে মাদক জন্ম দিচ্ছে একের পর এক অপরাধ। শুধু মাদকের কারনে ,ছেলের হাতে পিতামাতা, স্বামীর হাতে স্ত্রী, ভাইয়ের হাতে ভাই, প্রেমিকের হাতে প্রেমিকাখুন হওয়ার ঘটনা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর বের হয়েছে। মাদকের ছোঁয়ায় সম্ভাবনাময় তরুণরা অধঃপতনের চরম শিখরে উপনীত হচ্ছে। মাদকের ক্ষতিকারক ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচালক, মানসিক হাসপাতালের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ঝিনাইদহ জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ কেরামত আলী ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, মাদকদ্রব্য হলো একটি রাসায়নিক দ্রব্য, যা গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়ে ও আসক্তি সৃষ্টি করে । মাদকের প্রভাবে মানসিক আচ্ছন্নতা ,মেজাজ ,শারীরিক-মানসিক ও রক্তচাপ পরিবর্তন হয় । মাদক গ্রহণে ব্যক্তির এমন এক ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়, যার ফলে মাদক সেবনকারী ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক অনুভূতির এক ধরনের পরিবর্তন আসে যাকে তারা নেশা হিসেবে বিবেচনা করে । মাদক গ্রহণ করলে মানুষের শারীরিক মানসিক অবস্থার ব্যাপক নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং মাদকদ্রব্যের উপর নির্ভরশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি দ্রব্যটি গ্রহণের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, ব্যক্তির এই অবস্থাকে বলে মাদকাসক্তি । জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য আব্দুর র‌উফ মোল্যা বলেন, সুশীল সমাজ ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে – ‘মাদক । মাদক একটি ভয়াবহ সমস্যা । পুলিশ প্রশাসনকে আরো আন্তরিক হতে হবে কারণ দেখা যাচ্ছে মাদক মুক্ত এলাকায়‌ই বেশিরভাগ মাদক সেবন ও বিক্রি চলছে । মাদক নিয়ন্ত্রণে থানা পুলিশের কি ভূমিকা রয়েছে তা জানতে চাইলে অভয়নগর থানার পুলিশ পরিদর্শক একে এম শামীম হাসান জানান, জনগণের সাথে মিশে সহজে খোঁজ খবর নেয়ার উদ্দেশ্যেই বিট পুলিশিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে বলে জানান এ কর্ম‌কর্তা ।