আগামীকাল মহালয়া, মহালয়া কী এবং কেন পালন করা হয়


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১, ২০২৪, ৯:১২ অপরাহ্ন / ৩১
আগামীকাল মহালয়া, মহালয়া কী এবং কেন পালন করা হয়

শ্যামল চন্দ্র রায়,
জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি-

“মহালয়া” হলো পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ। এর মাধ্যমে দূর্গাপূজা উৎসবের সূচনা হয়। দেবী দূর্গা এই দিন পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। বাঙ্গালীরা ঐতিহ্যগতভাবে দেবী মাহাত্মম্ শাস্ত্র থেকে স্তোত্র পাঠ করতে মহালয়ার দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে।

২০২৪ সালের ১ অক্টোবর ৯ টা ৩৫ মিনিট ১ সেকেন্ড থেকে মহালয়া অমাবস্যা তিথি শুরু হয়ে ২ অক্টোবর ১১টা ৩৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে শেষ হবে। তবে ২ অক্টোবর বুধবার মহালয়ার অনুষ্ঠান ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে কলা কাটার মধ্য দিয়ে সাড়ম্বরে পালিত হবে। “মহালয়া ‘শব্দটির অর্থ-মহা অর্থ- মহান আলয় অর্থ-আশ্রয়। ‘মহালয়া’ শব্দটিকে স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ এই দিনেই পিতৃপক্ষের অবসান হয় এবং অমাবস্যার অন্ধকার দূর হয়ে আলোকময় দেবীপক্ষের শুভারম্ভ হয়। এখানে দেবী দূর্গাই হলেন সেই মহান আলয় বা আশ্রয়। সবাই নিশ্চিত মহালয়া মানে দুর্গাপূজার দিন গোনা, মহালয়ার ৬ দিন পর মহাসপ্তমি।

ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য। দুর্গাপূজা বৎসরে দুই বার পালন করা হয়।একটি দুর্গা পূজা হলো বসন্তে, সেটাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। আর একটি শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে শারদীয় পূজা ও দেবীর অকাল-বোধন বলা হয়।

দুর্গাদেবীর আগমনী সংগীত-‘মহালয়া’ সনাতন ধর্মে কোনো শুভ কাজ করতে গেলে, বিবাহ করতে গেলে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের জন্য, সঙ্গে পুরো জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। তর্পণ মানে খুশি করা। রামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের আগে এদিনে এমনই করেছিলেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাহাকে ‘মহালয়’ বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষের (অমাবস্যা) শেষদিন এটি এবং দেবীপক্ষের (পূর্ণিমা) সূচনা।

পিতৃলোককে স্মরণের অনুষ্ঠানই মহালয়া। এমনটিও বলা হয়ে থাকে যে, পিতৃপক্ষের অবসানে, অন্ধকার অমাবস্যার সীমানা ডিঙিয়ে আমরা যখন আলোকময় দেবীপক্ষের আগমনকে প্রত্যক্ষ করি-তখনই সেই মহালগ্নটি আমাদের জীবনে ‘মহালয়ার ‘ বার্তা বহন করে আনে। এ ক্ষেত্রে স্বয়ং দেবীই হচ্ছে সেই মহান আশ্রয়, তাই উত্তরণের লগ্ন টির নাম মহালয়া। মহালয়ার মধ্য দিয়েই দেবীর মর্ত্যে আগমনের সূচনা ঘটে। বিশেষ পূজা আর মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন করা হয়। মহালয়ার সঙ্গে অবসান হয় কৃষ্ণপক্ষের। এর পর সূচনা হয় দেবীপক্ষের। এরপর শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত নয়টি রাত্রিতে দুর্গার নয়টি রূপের পূজা চলে। এই নয়টি রূপের নাম হল-শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মান্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী, সিদ্ধিদাত্রী।

বাংলার মাটিতে যেভাবে দূর্গাপূজার গুরুত্ব রয়েছে ঠিক সেভাবেই মহালয়াও পালিত হয় ব্যাপক আড়ম্বরে। বাংলায় সবাই মহালয়ার জন্য অপেক্ষা করেন, কারণ এখানে দেবী দূর্গাকে কন্যা রূপে মানা হয়। এই দিনে দেবী দূর্গার প্রতিমা তৈরি করা হয়। তার চোখ আঁকা হয় এবং প্রতিমা সহ মণ্ডপ সাজানো হয়। দেবী দূর্গার প্রতিমা তৈরীর কারিগররা আগে থেকেই কাজ শুরু করলেও মহালয়ার দিন প্রতিমাকে চূড়ান্ত রূপ দেন। আর এটাই প্রথা হয়ে আসছে বহু যুগ ধরে। মহালয়ার দিনে পিতৃপক্ষ শেষ হয় এবং এই দিন থেকে দেবিপক্ষ শুরু হয়। তবে স্বাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলেন, পিতৃপক্ষের অবসানে অমাবস্যার অন্ধকার পেরিয়ে আমরা আলোক উজ্জ্বল দেবিপক্ষে আগমন করি, তাই সেই মহা-লগ্ন আমাদের জীবনে ‘মহালয়া’। এক্ষেত্রে দেবী দূর্গাকেই সেই মহান আশ্রয় বলা হয়ে থাকে এবং আঁধার থেকে আলোকে উত্তরণের লগ্নটিকে বলা হয় ‘মহালয়া’।