আধুনিকের ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৮, ২০২২, ১:৩৭ অপরাহ্ন / ৩৪৮
আধুনিকের ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প

 

দিপংকর বনিক দিপু
দিরাই(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ

শুধু ঝাঁজেই নয়, মুখের রসনা বাড়াতে খাবারের স্বাদ রাঙাতে, ত্বকের যত্নে, এমনকি গাঁটের ব্যথা কমাতে সরিষার তেলের তুলনা নেই। সরষে ইলিশ থেকে শুরু করে মুড়িমাখা ও শরীরের সব জায়গায় মালিশ করা যায় সরিষার তেল।

চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, সরিষার তেল মস্তিষ্কের জন্য ভীষণ উপকারী। বিশেষ করে অবসাদ কাটাতে, স্মৃতিশক্তি আর মনঃসংযোগ বাড়াতে এই তেল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরিষার তেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং পাশাপাশি এটি ত্বক এবং চুলের জন্যও খুব উপকারী।এ তেলে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল উপাদান, যা বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণুকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে সরিষার তেল বিদ্যমান ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের বিভিন্ন ব্যথা, যন্ত্রণায় উপশম ঘটাতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, শরীরের ক্যানসার কোষগুলো দ্রুত ধ্বংস করতে এ তেলের ভূমিকা রয়েছে। পাশাপাশি এটিতে মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদপিণ্ডের জন্যও দারুণ উপকারী। যা বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া শীতের মৌসুমে ঠান্ডা লাগার হাত থেকে শরীরকে রক্ষাও করে সরিষার তেল।

দিরাই উপজেলার পৌরসভা হারানপুর এলাকায় ঘানিভাঙা খাঁটি সরিষার তেল উত্তোলন করছিল মহামায়া বিশ্বাস। তাও আবার চোখের সামনে দেশি সরিষা ভাঙিয়ে তৈরি করা খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া যেতো।

তিনি ঘানি টানতে গরু,মহিষ কিংবা ঘোড়া ব্যবহার করেন না।তিনি নিজেই ঘানি টানতেন, ঘানির ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে ধীরে ধীরে ঘুরে সারা দিন ঘানি টেনে বের করতেন তেল। মাঝে মাঝে বাড়ির মহিলারা সংসারের অন্য্যান্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঘানিতে সরিষা দিয়ে যেতেন। এতে করে সারা দিন ঘানি ঘুরিয়ে উৎপাদন করতেন খাঁটি সরিষার তেল। ঘানিভাঙা তেলের ব্যাপক চাহিদার পরও আধুনিক মেশিননির্ভর শিল্প ও প্রযুক্তির প্রসারের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প।

মহামায়া বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান ৫০বছর ধরে ঘানিশিল্পের সাথে আছি। আমার জীবনযোদ্ধ করে চার ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে সংসারের হাল ধরে রেখেছি। আধুনিক মেশিন আশাতে বিগত পাঁচ বছর ধরে ঘানিতে আর তেল ভাঙতে পারি না,এখন ধীরে ধীরে ঘানির গাছটিও নষ্ট হয়েগেছে।

মহামায়া বিশ্বাস আরও বলেন ঘানিকে ‘গাছ’ বলা হয়। গাছে একটি বিশেষ আকৃতির ছিদ্রের ভেতর দিয়ে তেল পড়ে এবং তা একটি ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি গাছে একবারে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি সরিষা ভাঙা সম্ভব হয়। এই পরিমাণ সরিষা থেকে তেল উৎপাদন করা যায় দেড় থেকে পৌনে দুই কেজির মতো। পাঁচ কেজি সরিষা ভাঙতে সময় লাগে প্রায় তিন থেকে সারেতিন ঘণ্টা। এভাবে দিনে একটি ঘানি থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি সরিষা ভাঙা সম্ভব হয়।

ঘানিভাঙা তেলের চাহিদা কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে মহামায়া বিশ্বাস বলেন প্রতিদিনই সরিষা নিয়ে লোকজন আসে কিন্তু ঘানিভাঙার গাছ না থাকায় সরিষা ভাঙাতে পারি না। ২০কেজি সরিষা ভাঙলে কি পরিমাণ তেল পান জানতে চাইলে তিনি বলেন ২০কেজি সরিষা ভাঙলে ৭ থেকে সাড়ে ৭ কেজি তেল পাওয়া যেত তার বিনিময়ে ১কেজি তেল সাথে ক্ষইল পেতাম। তা বাজারে বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়, তা দিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা খরচসহ সংসার চালাতে তাদের কষ্ট হতো। তাই এই ঘানিশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।