একটি উপহার, অতঃপর-


প্রকাশের সময় : জুলাই ৩০, ২০২৪, ১:২৫ পূর্বাহ্ন / ৭৫
একটি উপহার, অতঃপর-

সুবর্ণা দাস
২৭-০৭-২০২৪

মেয়েটি ৩য় শ্রেণি থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে চতুর্থ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে মেধা পুরস্কার হিসেবে বিদ্যালয় থেকে তাকে একটি জামরুল গাছের চারা আর একটি জ্যামিতি বক্স উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। গাছটি খুব সুন্দর লকলকে ছোট্ট কচি! গাছের কচি পাতাগুলো তাকে এক স্বপ্নের জগতে নিয়ে গেলো। রূপার ছোট্ট কচি মনে একটি উপহার তাকে যে কতোটা আনন্দ দিয়েছে তা হয়তো বড়দের মধ্যে পাঁচ ভরি গহনা হলেও এত খুশি দেখা যেতো না! বাড়ি এসে মায়ের সহযোগিতায় বাড়ির ঠিক পিছনেই গাছটি সে রোপণ করলো। এরপর নিজের হাতে তার পরিচর্যা করতে লাগলো।
প্রতিদিন ভোরে উঠেই সে আগে গাছটির কাছে যায় আর দেখে কতটুকু বড় হলো সেটি। ধীরে ধীরে রূপাও বড় হচ্ছে আর তার লাগানো গাছটিও বড় হচ্ছে। বছর খানেক যেতেই গাছে প্রথম ফুল এলো, রূপার সে কি আনন্দ! ফুল থেকে পরিপক্ক গোলাপি টসটসে জামরুল হলো! নিজের পাওয়া উপহারের জামরুল গাছে প্রথম ফলন রূপার কচি মনে এক অনাবিল আনন্দ এনে দিলো। প্রথম ফল সে ভগবানকে নিবেদন করলো। এরপর থেকে প্রতিবছর নিয়ম করে দুবার ফলন হচ্ছে গাছে। রূপা যখন অনার্সে উঠলো তখনও ঠিক একইভাবে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই আগে গাছটি দেখবে এরপর তার দিন শুরু হয়।
সেবার খুব বড় বন্যা হলো, বাড়ির পিছনে জল চলে এলো! গাছটিকে বন্যা আক্রান্ত করলো! আটদশদিন পর যখন জল নেমে গেলো গাছটির পাতা কেমন নিষ্প্রাণ হতে লাগলো! রূপার খুব ভয় হতে লাগলো, সে তার মা বাবাকে সাথে নিয়ে গাছের পরিচর্যা করতে লাগলো! কিন্তু কাজ হলো না, তিনচারদিন পর গাছের সকল পাতা ঝরে গেলো! অবশেষে গাছটি মরে গেলো! রূপা ভীষণভাবে আহত হলো! গাছটির মরে যাওয়া সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না! মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তার বাবা দুটি জামরুল চারা এনে বাড়ির পাশে লাগালো। কিন্তু রূপা তার উপহারকে ভুলতে পারছে না! মেয়েটা সাময়িক একটু বিষণ্ণ হয়ে উঠলো! প্রতিদিন ভোরে উঠেই সে পুরোনো অভ্যাসে গাছটিকে দেখতে যায় আর ভগ্ন মনে ফিরে আসে। সপ্তাহপর একদিন বিকেল বেলা যেখানে জামরুল গাছটি ছিল তার একটু উপর প্রান্তে কিছু ঝোপঝাড় লতাপাতা পরিষ্কার করতে গিয়ে রূপা দেখলো ওখানে এক জায়গায় চারটি জামরুলের চারা! তার উপহারের জামরুল গাছের বীজ থেকে হয়েছে চারাগুলো। সে আনন্দে চিৎকার করে মা কে ডাকলো! তার বিষণ্ণ মনটা আবার উদ্বেলিত হলো! এরপর চারাগুলো তুলে সে নিজ হাতে তার পছন্দমতো জায়গাতে লাগালো যাতে এবার আর বন্যা হলেও সেই জল গাছগুলো ছুঁতে না পারে!

ঠিক এভাবে আমাদের জীবন থেকেও প্রিয় বস্তু বা ব্যক্তি হারিয়ে যায়! কখনো চিরতরে, কখনো সাময়িক বিচ্ছেদ! তখন আমরা বড় দিশাহীন হয়ে পড়ি! আমরা মানুষ বলে, আমাদের মন আছে বলে আমরা বিচ্ছেদ মানতে পারি না!
তবুও মানুষ বলেই বেঁচে থাকতে হয় আমাদের! কপাল খুব ভালো হলে পুনরায় আশার বীজ উপ্ত হয়, নয়তুবা হতাশায় ডুবে যায় জীবন পথ!!

শিল্পী / ঢাকা


There is no ads to display, Please add some