[gtranslate]

কাজিপুরের চরাঞ্চলে হাওয়ায় দোলে ছনক্ষেত- ভাগ্য ঘোরে ছিন্নমূল মানুষের


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২১, ২০২৫, ৭:৪৫ পূর্বাহ্ন / ১২৮
কাজিপুরের চরাঞ্চলে হাওয়ায় দোলে ছনক্ষেত- ভাগ্য ঘোরে ছিন্নমূল মানুষের

 

এনামুল হক, (কাজিপুর) সিরাজগঞ্জঃ ভাঙন তান্ডব আর পলিবাহী স্রোতস্বীনি যমুনা। কখনো শান্ত, কখনো রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। গ্রাস করে আবাদী জমি, ভিটেমাটি, গ্রামীণ জনপদ। কখনো বুক উজাড় করে ঢেলে দেয় অনেক কিছু। পানি কমে যাবার পর জেগে ওঠে ভাঙনের ক্ষতচিহ্ন, জাগে চর। মাইলের পর মাইল উর্বর পলিসমৃদ্ধ সেই চরের বুকে গজায় ছন, স্থানীয় ভাষায় যাকে কাইশা বলে।

এবারের বন্যার পানি নেমে যাবার সাথে সাথে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিশাল চরাঞ্চলজুড়ে শোভা পাচ্ছে ছনপাতার সবুজ রং। হেমন্তের এই সময়ে কাশফুল ঝরে যেতে শুরু করেছে। চরে এখন হেমন্তের আকাশে সাদা সাদা মেঘ, আর নিচে হাওয়ায় দুলছে ছনক্ষেত। এই ছনক্ষেতের সবুজ ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে সোনালী রং ধরতে শুরু করেছে।
চরাঞ্চলের কয়েক হাজার প্রান্তিক কৃষক এই ছন সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

বন্যার পানি নেমে যাবার কিছুদিন পর ছনগুলো যখন এক থেকে দেড়ফুট লম্বা হয় তখন থেকেই কৃষকেরা তা সংগ্রহ করে পশুখাদ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি শুরু করেছে। চরের কিশোর, কিশোরী, ছেলে, বুড়ো, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা সবাই কমবেশি নিজেদের প্রয়োজনে ছন বা কাইশাগুলো কেটে গরুকে খাওয়ায়। বাজারেও এর বেশ চাহিদা রয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ছনগুলো। একসময় তাতে ফুল আসে। তখন পুরো চরকে মনে হয় একখন্ড সাদা আকাশ। এরপর থেকে চরবাসি সোনালী রং ধারণ করা ছনক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করেন। কাস্তে , বা কাস্তে সদৃশ ধারালো জিনিস নিয়ে তারা এখন ছন (কাইশা) কাটতে ব্যস্ত সময় পার করেন। নিজেদের ছোট ছোট নৌকাগুলোকে ঘাটে বেঁধে তারা ছন কাটতে ক্ষেতের মধ্যে ঢোকেন। কাইশা কেটে আঁটি বেঁধে দিনশেষে সেগুলো মাথায় করে বা ঘোড়ার গাড়িতে করে বয়ে নদীর ঘাটে নিয়ে আসে। পরে নৌকায় তুলে যমুনার পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরে। এক সপ্তাহ শুকানোর পরে ছনগুলো তারা বিক্রি করেন। শুকনো ছনগুলো তারা স্থানীয় হাটে বাজারে বিক্রি করে বেশ টাকা পান।

অনেক দূর থেকে ছনগুলো কিনতে পাইকার চলে আসে কৃষকের নিকট। স্তূপাকার করে রাখা সেই ছনগুলোকে দরদাম করে তারা কিনে নিয়ে যান। ছন বিক্রির টাকায় তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে।
ছন কাটতে আসা কাজিপুরের ফুলজোড় চরের বারিক মিয়া জানান, কাইশাগুইল্লা একটু বড় হইলে কাইটা নিয়া বাজারে বেচি। ছোট কাইশা কাইটা গরুকে খাওয়াই। এরপর এহন কাটতাছি বড়গুইল্লা। রোইদে শুকাইয়া তারপর বাজারে বেচমু।

একই কথা জানান ছন কাটতে আসা সানবান্ধা চরের করিম শেখ, তেকানি গ্রামের আচফুল নেছা ও বদিউজ্জামান ব্যাপারি। তারা জানান, চরের বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা ও ভূমিহীন ছিন্নমূল মানুষেরা এই সময়ে ছন (কাইশা ) বিক্রির টাকায় সংসার খরচ মেটায়।
নতুন মাইজবাড়ি চরের সাবেক ইউপি সদস্য মোকলেছুর রহমান জানান, চরের ছিন্নমূল মানুষ বছরের চার থেকে পাঁচমাস ছন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন ছনগুলো বগুড়ার জেলার শেরপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে যাচ্ছে ব্যাপকহারে। সেখানে স্থানীয়ভাবে ছন থেকে ডালা, ঝাঁকা, ফুলদানীসহ সংসারের নিত্য ব্যবহার্য অনেক জিনিস তৈরি হচ্ছে। শুনেছি অনেক হাতঘুরে সেগুলো নাকি দেশের বাইরেও যাচ্ছে।

এ/হ