
এনামুল হকঃ স্টাফ রিপোর্টারঃ
দুই চোখেই আলো নেই বায়েজিদের। জন্মের চার বছরের সময়ে চোখ ওঠা রোগে চিকিৎসা না পেয়ে অন্ধত্ব বরণ করেন তিনি। কিন্তু থেমে থাকেননি। পড়ালেখা করেছেন ধর্মীয় লাইনে। কোরান মুখস্ত করে হাফেজ হয়েছেন। সেইসাথে ক্বারিয়ানাও পাশ করেছেন। জীবিকার তাগিদে এই যুবক এখন করেন ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের গাড়াবেড় গ্রামের আছাব আলীর পুত্র বায়েজিদের দোকানটিও নিজ গ্রামেই।
জানা গেছে, হাফেজ ও ক্বারি পাশ করে কোথাও কোন কাজ না পেয়ে নিজ গ্রামের একটি মসজিদে পেশ ইমামের দায়িত্ব নেন। তাতে যা পান তা দিয়ে সংসার খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়ায় বাড়তি উপার্জনের লক্ষ্যে তিনি গ্রামেই একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান দিয়েছেন। এর পূর্বে তিনি কিছুদিন পর্যন্ত নীলফামারি জেলার একটি মাদ্রাসায় ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষকতা করেন। মসজিদের যৎসামান্য বেতনে স্ত্রী ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে কোনমতে চলছে তার সংসার।’
বায়েজিদ বলেন, পারিবারিক টানা পোড়েন থেকে বাঁচতে বন্ধুর পরামর্শে মাত্র ১৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে এক বছর আগে ফ্লেক্সিলোডের দোকান শুরু করেন। ‘রাস্তার পাশেই একটি টিনের একচালা ভাড়া করা ঘরে একটি টেবিলে বসে মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুৎ বিল, বিকাশ ও নগদে টাকা লেনদেন করেন। একটি বাটন ও একটি স্মার্ট ফোনে টক ব্যাক ফাংশন ব্যবহার করে তিনি দোকান চালান।
মাস শেষে প্রায় দুই হাজার টাকার মতো উপার্জন হয়। এর সাথে তিনি সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা পান। এ দিয়েই টেনেটুনে সংসার চলছে তার।ব্যবসায় পুঁজি বাড়ালে আরেকটু বেশি লাভ করা যেত জানিয়ে বায়েজিদ বলেন, আরেকটু আয় হলে সংসারটা ভালো চলতো। সরকার অথবা সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে এ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলেন, ‘সমাজে অনেক বিত্তবান আছে যারা অসহায়দের পাশে দাঁড়ান। সরকারিভাবেও সহায়তা করে। আমি যদি আর্থিক সহযোগিতা পেতাম তাহলে ফ্লেক্সিলোডের পাশাপাশি অন্য ব্যবসাও করার সুযোগ পেতাম। নিশ্চিন্তে দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে ঘুমোতে পারতাম।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এরশাদ হোসেন বলেন, ‘খুবই শোচনীয় অবস্থা বায়েজিদের। সহায় সম্বলহীন। চোখের আলো না থাকলেও কারো কাছে হাত না পেতে সে ব্যবসা করছেন তিনি। সরকার বা বিত্তবান কেউ সহযোগিতা করলে হয়তো ব্যবসাটা বড় করতে পারতেন।’
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উনি সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা পান। এরপরেও আবেদন করলে তাকে সমাজসেবা অফিস থেকে সহায়তা করা যাবে। এছাড়া ডিসি স্যারের নিকেট আবেদন করলেও উনি সহযোগিতা পেতে পারেন।
এ/জে
আপনার মতামত লিখুন :