গুরুদাসপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা সমকালের গুরুদাসপুর প্রতিনিধি গুরুত্বর আহত


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৪, ২০২৩, ৮:৫৮ অপরাহ্ন / ৬১৮
গুরুদাসপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা সমকালের গুরুদাসপুর প্রতিনিধি গুরুত্বর আহত

নাটোর প্রতিনিধি ঃ

ফসলি জমিতে পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহের জের ধরে সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসী নান্নু মোল্লাসহ তার সহযোগীরা। ওই হামলায় গুরুত্বর আহত হয়েছেন দৈনিক সমকালের গুরুদাসপুর প্রতিনিধি মো. নাজমুল হাসান নাহিদ (২৮)। তাকে উদ্ধার করে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
গতকাল বুধবার সন্ধার দিকে উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দুর্গাপুর স্লুইচগেট মসজিদের কাছে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত নান্নু মোল্লা পৌর সদরের চাঁচকৈড় মোল্লাপাড়া মহল্লার নাছির মোল্লার ছেলে।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক অক্সিন জানান, আহত সাংবাদিক নাজমুল হাসানের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তাছাড়া তার বুকের দুইটি হাড় ভেঙ্গে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এরআগে বুধবার সকালে গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সদস্যরা পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহে যান দুর্গাপুর স্লুইচগেট এলাকার হাঁড়িভাঙ্গা বিলে। সেখানে অন্যান্যদের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী নান্নু মোল্লার ১৫ বিঘা জমিতে সরিষা নষ্ট করে পুকুর খনন করছেন। অভিযুক্ত নান্নু মোল্লার পুকুরে গিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার ফেজবুক পেইজে লাইভ দেন সংবাদকর্মীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নান্নু মোল্লা সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।

সংবাদকর্মীরা জানান, ওসি ও এসিল্যান্ডের উপস্থিতিতে থানা ও উপজেলা প্রশাসন পুকুর খনন কাজে ব্যবহৃত একটি এক্সকেভেটর জব্দ করেন নান্নু মোল্লার পুকুরের পাশে। এসময় সংবাদ সংগ্রহে যান গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের অন্তত ১০ জন সাংবাদিক। এসময় পৃর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক নান্নু মোল্লা (৪৫) ও তার ছোট ভাই নহর মোল্লা (২০), জুয়েল মোল্লা (২৮), মো. সুমনসহ (৩০) অন্তত ১০ জনের একটি দল সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীরা জানান, গুরুদাসপুর থানার ওসি ও সহকারি কমিশনারের (ভূমি) উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের ওপর নান্নু মোল্লাসহ তার বাহিনীরা ওই হামলা চালান। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুল মতিন ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান শাকিল ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

আহত সাংবাদিক নাজমুল হাসান নাহিদ বলেন, দুর্গাপুর মসজিদের সামনে তারা প্রায় ১০ জন সংবাদকর্মী সংবাদ সংগ্রহের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় নান্নু মোল্লাসহ অন্তত ১০জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের ওপার হামলা চালান। তাকে সড়কে ফেলে এলোপাথারিভাবে পিটিয়ে যখম করেন। এসময় ইত্তেফাকের রাশিদুল, মোহনা টেলিভিশনের মিজানুর রহমান, এশিয়ান টেলিভিশনের মেহেদী হাসান তানিম, আমার সংবাদের আব্দুস সালাম, সংবাদের সাকিল, আজকের দর্পনের জুয়েল হাসান টিপু, বাংলাদেশের খবরের আবু হেনা মোস্তফা কামালকেও লাঞ্চিত করা হয়।

চলনবিল প্রেসক্লাবের সভাপতি কালের কন্ঠের প্রতিনিধি আলী আককাছ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষিদের বিচার দাবি করেন।

গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি যুগান্তরের গুরুদাসপুর প্রতিনিধি দিল মোহাম্মদ জানান, ‘গুরুদাসপুর উপজেলাজুড়ে পুকুর খনন মহামারী আকার ধারণ করেছে। কৃষিতে মারাত্মকভাবে এর প্রভাব পড়ছে। একারণে গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সদস্যরা পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। আমি ওই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি জানাচ্ছি।’

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, গুরুদাসপুরে কোনো পুকুর খনন হবেনা। সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়টি পুলিশের।
নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।