গ্রীষ্মকালীন শসা চাষ


প্রকাশের সময় : মার্চ ১০, ২০২৫, ৯:৪৬ অপরাহ্ন / ২৬
গ্রীষ্মকালীন শসা চাষ

সরকার মো. আবুল কালাম আজাদ

উপযুক্ত মাটি-বন্যা মুক্ত দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে শসা ভালো হয়। শসা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই শসা আবাদের জন্য উচু জমি নির্বাচন করতে হবে।
উর্বর দোআঁশ মাটি যার পিএইচ বা অম্লমান ৫.৫ থেকে ৬.৮ এর মধ্যে সে মাটিতে শসা সবচেয়ে ভালো হয়।
শসার জনপ্রিয় জাত সমূহ-জনতা, রিফা, ময়নামতি, গ্রীণবার্ড, সিডর, তুফান, স্মার্ট বয়, আলাভী সুপার, নয়নতারা, এলিন,সালাদ, মধুমতি, গ্রীণ সুইটি, গ্রীণ বিউটি।
বীজ পরিস্কার ও চিটামুক্ত হতে হবে এবং সকল বীজের আকার আকৃতি একই হতে হবে।
বীজহার/বীজের পরিমান-সাধারণত শতক প্রতি ২ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। প্রতি মাদায় ২ টি বীজ বা সবল চারা রোপন করতে হবে। চারার ক্ষেত্রে ১৫-২০ দিনের চারা রোপন করতে হবে।
বীজ রোপনের সময়-শসা সারা বছর আবাদ করা যায়। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস বীজ রোপন করা ভাল।
চারা তৈরি/বীজতলা তৈরি-শসার চারা তৈরির জন্য ৬*৮ ইঞ্চি সাইজের পলিব্যাগে পঁচা গোবর ও মাটি ৫০ঃ৫০ অনুপাতে মিশিয়ে পলিব্যাগ ভরতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২ টি করে বীজ রোপন করা উত্তম।


মুল জমি তৈরি-যেসব জমি উঁচু ও বর্ষার পানি আটকে থাকে না এমন জমি প্রথমে আগাছামুক্ত করতে হবে। তারপরে আড়াআড়ি ভাবে ৪ থেকে ৫ টি চাষ দিয়ে জমিতে বেড করতে হবে।
বেডের সাইজ-প্রতিটি বেড ১.৫ মিটার চওড়া (৪.৫০ ফিট) ও জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী লম্বা হবে। পাশাপাশি দুই বেডের মাঝে ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া ও ১৫ সেন্টিমিটার গভীর সেচ নালা থাকতে হবে।
মাদা তৈরি-প্রতি বেডের মাঝে সারি করে ১ মিটার দুরত্বে বা (৩ ফুট) দূরে দুরে মাদা তৈরি করে ৪৫ সে: মি: দৈর্ঘ্য,প্রস্থ, ও গভীরতা মাপে গর্ত করে মাদা তৈরি করতে হবে। বীজ বোনার কমপক্ষে ১০ দিন আগে মাদা তৈরি করতে হবে।
চারা/বীজ রোপণ দূরত্ব-শসার বীজ/চারা সারি করে লাগানো হয়। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে ১.৫ মিটার ও প্রতি সারিতে চারা লাগাতে হবে ১.৫ মিটার পর পর।
সার প্রয়োগ-জমি তৈরির শেষ চাষে প্রতি শতক জমিতে
গোবর সার ৩০ কেজি
টিএসপি ৩০০ গ্রাম
এমওপি ২০০ গ্রাম
জিপসাম ৪০০ গ্রাম
দস্তা ৫০ গ্রাম (আলাদা ভাবে ৫-৬ দিন আগে)
বোরাক্স ৪০ গ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম ৫০ গ্রাম হারে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপনের ৭-১০ দিন আগে প্রতি মাদায়/গর্তে
গোবর ৩০ কেজি
টিএসপি ১২ গ্রাম
ইউরিয়া ১০ গ্রাম
এমওপি ২০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপনের ১৫-২০ দিন পরে শতক প্রতি
ইউরিয়া ২০০ গ্রাম
পটাশ ১০০ গ্রাম
চারা রোপনের বয়স ৩৫-৪০ দিনে শতক প্রতি
ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম
পটাশ ১৫০ গ্রাম
চারা রোপনের ৫৫-৬০ দিনে শতক প্রতি
ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম
পটাশ ২০০ গ্রাম হারে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনা-শসা পানির প্রতি খুব সংবেদনশীল। মাটি শুকিয়ে গেলে গাছ ঢলে আসে ও ফুল ঝরে যায়। তাই মাটির ধরন অনুযায়ী খরা দেখলে দ্রুত সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
পানি নিষ্কাশন-শসার জমিতে পানি জমে থাকলে গাছ হলদে হয়ে যায়। এবং বর্ষাকালে ক্ষেতে পানি জমে থাকলেও শসার জন্য ক্ষতিকর। কয়েক দিন পানি জমে থাকলে গাছের গোড়া পঁচে মরে যেতে পারে। সেজন্য নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
আগাছা দমন/পরিস্কার-শসার জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। শসার শিকড় মাটির গভীরে যায় না তাই হালকা ভাবে নিড়ানি দিতে হবে।
বিভিন্ন আগাছা শসা বিভিন্ন রোগের আশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করে যেমন-হাতিশুঁড় আগাছা পাউডারি মিলডিউ রোগের বিকল্প পোষক, ঝিলমরিচ মোজাইক ভাইরাস রোগকে আশ্রয় দেয়। বিশেষ করে মাদায় কোনো আগাছা রাখা চলবে না।
মাচা/বাউনি/জাংলা তৈরি-শসা আবাদে মাচা/বাউনি/জাংলায় চাষ করতে হয়। শসা গাছ ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলেই মাচা/বাউনি/জাংলা তৈরি করে দিতে হবে। মাচা/জাংলা/বাউনি মাটি থেকে ১.৫ মিটার উঁচু হবে। বাঁশের খুঁটি ও জিআই তার বা নাইলনের রশি দিয়ে মাচা/বাউনি/জাংলা তৈরি করা যায়।
ফসল তোলা-জাতভেদে শসার বীজ রোপন করার ৩০-৩৫ দিনে ফুল আগে ফুল আসার ৭-১০ দিন পর থেকেই শসা উত্তোলন করা যায়।

ফলন-৩-৪ দিন পরপর শসা উত্তোলন করতে হয়।
শতক প্রতি জাত ভেদে ১৫০-২০০ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়।
জীবনকাল-শসার জীবনকাল জাত ও আবহাওয়া ভেদে ৭০ থেকে ৯০ দিন হতে পারে।

লেখক:
সরকার মো. আবুল কালাম আজাদ,
সভাপতি-বাংলাদেশ পেশাজীবী ফেডারেশন।


There is no ads to display, Please add some