শরীফ নুরুল আম্বিয়া
জয় বাংলা, – কোর্ট আদেশে জাতীয় স্লোগান এর মর্যাদা রহিত হয়েছে বলে সংবাদ বেরিয়েছে। কোন আগ্রহী ব্যক্তি কোর্টে গিয়েছিলেন এই আদেশ চেয়ে, এবং তিনি সফল হয়েছেন। তবে এই আদেশ জয় বাংলার আওয়াজ বন্ধ করতে পারবে না।
জয় বাংলা স্লোগান, জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষনা করার কি দরকার ছিল, তা আমার বোধগম্য হয় নাই। সমগ্র জাতি এই স্লোগানে আপ্লুত হয়েছিল একসময়। বাংলাদেশ এর স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারায় এক পর্যায়ে সংগ্রামী কর্মীদের মুখে মুখে এই স্লোগান এর উৎপত্তি ও বিস্তার লাভ করে। সিরাজুল আলম খানের ধারার(নিউক্লিয়াস) সংগে যুক্ত কর্মীবাহিনী, গোড়া থেকে যারা স্বাধীনতাপন্থী ছিলো, এই স্লোগান ও এর অন্তর্নিহিত আবেগ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল। এবং এই কাজ করতে গিয়ে ছাত্রলীগ-আওয়ামীলীগ এর স্বায়ত্বশাসন পন্থিদের সংগে মিটিংএ মিছিলে ধাক্কাধাক্কি ছিল একসময়কার নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। পল্টনের এক আওয়ামীলীগ জনসভায়, খুব সম্ভব ১৯৬৯ সনের, শেখ মুজিবের প্রকাশ্য সমর্থনের আগ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ মহলে এটা বিতর্কিত বিষয় ছিল। ছাত্রলীগ এর ক্ষুদ্র অংশ জয় বাংলা উচ্চারণ না করলেও ছাত্র-যুবদের মধ্যেও বিস্তৃত হতে অসুবিধা হয় নাই। ‘৭১ এর মার্চ মাসের ১ তারিখের পর স্বাভাবিক ভাবেই সব বাঁধ ভেংগে ‘জয় বাংলা’র জোয়ারে দেশ ভেসে যায়। সিরাজুল আলম খান এটাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবেই গ্রহন করেছিলেন। তবে সিরাজ ভাই এর ইচ্ছায় এটা জাতীয় স্লোগান করা হয় নাই, কেননা শেখ হাসিনার চরিত্র তা সমর্থন করে না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে ‘জয়বাংলা’র আওয়ামী করনের পর, শেখ হাসিনা ‘জাতীয় স্লোগান’ এর ট্যাগ লাগিয়ে ফ্যাসিবাদী রাজনীতি আরো শক্ত করতে চেয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধারা জয়বাংলার চেতনা ও আবেগ ধারন করে, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছে,যুদ্ধ করেছে। হাল আমলে হাসিনার কোন মতলবের সংগে মুক্তিযুদ্ধের জয়বাংলার কোন সম্পর্ক নাই। জাসদপন্থীরা আওয়ামী অত্যাচার+নির্যাতনে ১৯৭৩ এর পর ‘জয়বাংলা’ বলা ছেড়ে দিয়েছিল, ১৯৯৬ সনের পর, জোরে না হলেও, আবার শুরু হয়েছিল। রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর স্লোগান তৈরি হয় বা চালু হয়। আদালতের আশ্রয় নিয়ে জয়বাংলা যারা বাদ দিলেন, তারা সন্তর্পনে সম্ভবত নতুন কোন স্লোগান চালু করার উদ্দেশ্যে, বা নতুন কিছু রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে। কি করেন মানুষ তা নজরে রাখবে।
তবে এটা হলপ করে বলতে পারি, কারসাজি করে কোন স্লোগান বাজার পায় না, বা মানুষের মুখে উঠে আসে না। ‘জয় বাংলা’ বাংগালীর হৃদয় উৎসরিত স্লোগান, এটা আওয়ামীলীগ এর স্লোগান নয়, উৎপত্তিকালে তারা বিরোধিতা করেছে, রাজনীতির স্বার্থে তারা এটা ব্যবহার করেছে, তবে এজন্য তারা ধংসপ্রাপ্ত(প্রায়) হয় নাই।
এই স্লোগানের মহিমায় বাংগালী জাতি জাগ্রত হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, দেশ গঠনে জয় বাংলার বাণী এখনো প্রয়োজন রয়েছে। জয় বাংলার স্রোতধারায় দেশে বিদ্যমান অন্যান্য জাতিসত্বা সংগে নিয়ে আধুনিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে এ বিশ্বাস আমাদের আছে।
জয় বাংলা। জয় বাংলাদেশ।।
শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সভাপতি, বাংলাদেশ জাসদ।
আপনার মতামত লিখুন :