মোঃ মামুন অর-রশীদ,
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি-
কোন দম্পতির বিয়ের বয়স ৬ মাস, কারো ২ বছর আবার কারো ৫ বছরও পেরিয়েছে। অনেকের বিয়ের বয়স এক দশক পেরিয়ে হয়েছেন সন্তানের অভিভাবক। স্বামী-স্ত্রীর এমন সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে দিন দিন বেড়ে চলছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা।
কয়েক বছর আগে এমন ঘটনা কম শোনা গেলেও ঠাকুরগাঁওয়ে এখন তা হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞ। প্রতিদিন গড়ে বিবাহ-বিচ্ছেদ হচ্ছে ৪ টি। যার অন্যতম প্রধান কারন পরকীয়া প্রেম। এছাড়াও সংসারে বনিবনা না হওয়া, প্রেম করে বিয়ে, যৌতুক সহ আরো বেশ কিছু কারণ রয়েছে। জেলা রেজিষ্টার অফিস সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট কাজী রয়েছে ৬২ জন। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে আগষ্ট পর্যন্ত গত ৮ মাসে জেলায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে ১ হাজার ১ শত টি। নারীর মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়েছে ৬০০টি, ছেলের মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়েছে ৩০০টি, আর পারিবারিক ভাবে বিচ্ছেদ হয়েছে ২০০ টি।
স্থানীয় সমাজকর্মী আবু মহিউদ্দিন বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ সমাজে একটি ব্যাধির মত। বিবাহ বিচ্ছেদ প্রতিকারের জন্য সচেতনতা জরুরী। বর্তমান সমাজে পরকীয়ার কারনেই বেশির ভাগ সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের যে প্রয়োজনীয়তা এসব সম্পর্কে সমাজের সকলকে অবগত হতে হবে। আর বিবাহ বিচ্ছেদ কমানোর জন্য ধর্মীয় মূল্যেবোধ বৃদ্ধি করতে হবে।
কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক এর জন্য অনেকগুলো কারণ থাকে। আমি গত ১ মাসে যতগুলো তালাক করেছি বেশির ভাগই মেয়ের পক্ষ হতে। ছেলের পক্ষ হতে বা উভয় পক্ষ হতে তালাক খুবই কম। আর মেয়ের পক্ষ হতে বিচ্ছেদ এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন প্রধান কারণ পরকীয়া, বনিবনা না হওয়া, মেয়ের মা ও বোনের কুমন্ত্রনা, যৌতুক এর জন্য নির্যাতন। বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদ অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমরা চেষ্টা করি একটি বিচ্ছেদ এর আগে যেন কোনভাবে সেটাকে আটকানো যায়, কিন্তু তারপরও তা সম্ভব হয়না। আর একটি বিচ্ছেদ এর জন্য অনেকগুলো মানুষ কে সেটার কুফল ভোগ করতে হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড জয়নাল আবেদিন বলেন, কোর্টে এখন যতগুলো বিচ্ছেদ আসে তার মধ্যে মেয়ের পক্ষ হতে বেশি আসে। সংসারে স্বামী স্ত্রী মিল না হওয়ার কারনেই তালাক হচ্ছে। তবে আমি মনে করি সংসার জীবনে সমস্যাগুলো সমাধান করে একে অপরের ভুলত্রুটি মেনে নিয়ে চলাই জীবন।
জেলা সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক সাধারনত তিন প্রকার। ছেলের পক্ষ হতে তালাক, মেয়ের পক্ষ হতে তালাক, উভয় পক্ষ হতে তালাক। এ বছরে মেয়ের পক্ষ থেকে তালাক বেশি হয়েছে। পারিবারিক ভাবে তালাকের সংখ্যা খুবই কম।
আপনার মতামত লিখুন :