
সরকার মো. আবুল কালাম আজাদ,
বাংলাদেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে ধানই প্রধান খাদ্য শস্য। কিন্তু এই ফসলের অন্যতম বড় শত্রু হলো ইঁদুর। মাঠ পর্যায়ের তথ্য মতে, প্রতি বছর দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৮-১০ শতাংশ ইঁদুরের কারণে নষ্ট হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষকেরা রাসায়নিক বিষ ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করেন। এতে কিছুটা তাৎক্ষণিক ফল মিললেও, দীর্ঘ মেয়াদে ফসল, পাখি, গবাদিপশু ও মাটির ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এভাবে কৃষি ও পরিবেশ উভয়ই ঝুঁকির মুখে পড়ে। এই বাস্তবতায় এখন প্রয়োজন এমন একটি পদ্ধতি, যা হবে নিরাপদ, টেকসই ও সাশ্রয়ী। ঠিক এখানেই আসে সজিনার পাতার জৈব সমাধান।
কেন সজিনার পাতা:
সজিনা (Moringa oleifera) বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে পরিচিত একটি গাছ। এর পাতা শুধু পুষ্টিকর খাদ্য নয়, এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ভাবে অ্যালকালয়েড, ট্যানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড ও তীব্র গন্ধযুক্ত যৌগ। এই যৌগগুলো ইঁদুরের জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর ও অসহনীয়; ফলে তারা সেই এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। অর্থাৎ, এটি সরাসরি হত্যা নয়-বরং প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা, যা ইঁদুরকে দূরে রাখে অথচ পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না।
জমিতে সজিনা পাতার ব্যবহারবিধি:
১. প্রতি বিঘা জমির জন্য ২–৩ কেজি তাজা সজিনার পাতা সংগ্রহ করুন।
২. পাতাগুলো ভালো ভাবে পিষে ১০ লিটার পানিতে মিশান।
৩. ইচ্ছা করলে ২০০ গ্রাম নিমপাতা বা মরিচ বাটা যোগ করে কার্যকারিতা বাড়ানো যায়।
৪. মিশ্রণটি ছেঁকে স্প্রে বোতলে নিন এবং বিকেল বেলা বা সূর্যাস্তের আগে জমির আইল ও ইঁদুরের গর্তের আশেপাশে স্প্রে করুন।
৫. প্রতি ৫–৭ দিন অন্তর প্রয়োগ পুনরাবৃত্তি করুন যতক্ষণ না ইঁদুরের চলাচল বন্ধ হয়।
প্রাপ্ত ফলাফল:
ইঁদুরের চলাচল ধীরে ধীরে কমে যায়।
ধানের ক্ষতি ৫০–৭৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।
জমিতে কোনো রাসায়নিক অবশিষ্ট থাকে না।
ফসল ও মাটির প্রাকৃতিক ভারসাম্য অক্ষুণ্ণ থাকে।
মাঠ সচেতন কৃষকের জন্য বার্তা:
বর্তমান বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা শুধু উৎপাদন নয়, বরং বিষ মুক্ত উৎপাদন নিশ্চিত করাও জরুরি। তাই কৃষকদের এখন সচেতন হতে হবে পরিবেশ বান্ধব কৃষি চর্চায়। সজিনার পাতা দিয়ে ইঁদুর দমন একটি পরীক্ষিত জৈব পদ্ধতি, যা সহজলভ্য, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। রাসায়নিকের বিকল্প হিসেবে এটি হতে পারে “সবুজ কৃষি বিপ্লবের নতুন পথ।” ইঁদুর দমনে সজিনার পাতা ব্যবহারের প্রচলন যত বাড়বে, ততই কৃষকরা রাসায়নিক নির্ভরতা থেকে মুক্ত হবেন। এতে পরিবেশ রক্ষা পাবে, উৎপাদন ব্যয় কমবে, আর খাদ্য হবে আরও নিরাপদ।
কেন্দ্রীয় সভাপতি-বাংলাদেশ পেশাজীবী ফেডারেশন, কৃষি লেখক ও কথক-বাংলাদেশ বেতার।

আপনার মতামত লিখুন :