পদ্মার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কেড়ে নিচ্ছে বহু মানুষের স্বপ্ন


প্রকাশের সময় : জুলাই ১৩, ২০২৪, ৩:৪৮ অপরাহ্ন / ৭৭
পদ্মার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কেড়ে নিচ্ছে বহু মানুষের স্বপ্ন

নাজমুল হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার-

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় দৌলতদিয়া পদ্মা নদীর পাড়ে আবারো ভাঙনে দেখা যাচ্ছে। অতি বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসায় নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ার কারণে আবারো ভাঙনের দেখা দিয়েছে। তাঁর উপর পদ্মা পাড়ের মানুষের গলার কাঁটা হিসেবে রয়েছে মহা প্রকল্প।

সরকার মহা প্রকল্প গ্রহন করলে তিন ধাপে ব্যায় বৃদ্ধি পেলেও কাজ শুরু হয়নি এখনো। জানাযায়, দৌলতদিয়া পাটুরিয়া ঘাটকে নদী রক্ষা বাঁধ সহ আধুনিক নৌ-বন্দরের আওতায় আনতে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে আড়াই বছর আগে। অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি নৌ-বন্দরের জন্য প্রায় ৩০(ত্রিশ) একর জমি অধিগ্রহণ করে বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষ। এবং জমির মালিকদের কোন নতুন ভবন করতে নিষেধ করা হয়। আড়াই বছর পার হলেও জমি অধিগ্রহণের টাকা দেওয়া হয়নি স্থানীয়দের পাশাপাশি নদী রক্ষা বাঁধ নির্মিত হয়নি এখনে। গত একদশকে এক চতুর্থাংশে ঘাট পদ্মার পেটে বিলিন হয়ে গেলেও আশ্বাস ছাড়া কোন কাজ হয়নি দৌলতদিয়া ঘাটে।

সরজমিনে দেখা যায়,১ নং ফেরিঘাট ও লঞ্চ ঘাটের পাশেই নতুন পাড়া, দৌলতদিয়া ৪,৬ ও ৭নং ফেরিঘাটের মাঝে ছাত্তার মেম্বার পাড়ায় আবারো নদীর পাড় ভাঙন শুরু হয়েছে।

ঝুঁকিতে রয়েছে ৪নং ফেরিঘাটের মসজিদ, ইতিমধ্যে কিছু ঘর বাড়ি সড়িয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ জিওব্যাগ ফেললেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তাছাড়া জিওব্যাগ ফেলানো নিয়ে রয়েছে অনিয়মের বিস্তার অভিযোগ।

ভুক্তভোগী ছলিম সাধু বলেন, বিআইডব্লিউটিএ অ্যাকওয়ার নিয়ে আমাদের প্রায় তিন বছর আগে একটি নোটিশ দেয়। আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেবে, গাছপালা সহ শুধু লিখে নিয়ে যায়, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ পায়নি। কর্তৃপক্ষ প্রতিবার বলে ঈদের পরে করব, ঈদের পরে করব। কিন্তু সরকার এ বিষয়টি নিয়ে কোনো মাথা ঘামাচ্ছে না। নদীর পাড় ভেঙে আসছে, আমরা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে সড়াতে পারছি না, গাছপালা কাটতে পারছি না, নতুন করে গাছপালা লাগানো এবং ঘর বাড়ি মেরামত করতে ও পারছি না। এর মধ্যে কেউ ঘরবাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসাও করতে পারছেন না। অ্যাকওয়ারের মধ্যে আমার একটি বাড়ি আছে। বালুর ব্যবসা ছিল। বালুর ব্যবসা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বাড়ি ঘরে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নাই। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে অথচ মেরামতও করতে পারছি না।

মো. উজ্জল মন্ডল নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমরা কঠিন সমস্যার মধ্যে আছি। বন্দর করার জন্য আমাদের জমি অধিগ্রহণ করছে বিআইডব্লিউটিএ। আমাদের বাড়ি ঘর অবকাঠামো যা কিছু ছিল, তাঁরা সিজার লিস্ট করছে। পর্যায়ক্রমে একাধিক নোটিশ দিছে আমাদের এবং রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল আমরা সেখানে গিয়েছি। আমাদের বলা হয়েছে আপনাদের ঘর দরজা জমিসহ সবকিছু দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নদী বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পটির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়। এখানে আপনারা নতুন কিছু করতে পারবেন না। আপনাদের যা কিছু আছে, সেগুলোও নিতে পারবেন না। এখন আমাদের ঘর-দরজাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আমরা মেরামত করতে পারছি না। এক কথায় মানবেতর জীবনযাপন করছি।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. রহমান মন্ডল জানান, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন বাসি চায় নদী শাসন। যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে জীবন যাপন করতে পারে ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়াধীন বলে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, এখানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এটা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে গিয়েছে। পাস হলে ভুক্তভোগীদের টাকা পরিশোধ করে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, আমাদের ইনিশিয়ালি এটা প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট ছিল। কিন্তু এখন নতুন করে আবার সমীক্ষার প্রয়োজন। জমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। জমি নেওয়ার আগে অবশ্যই ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।


There is no ads to display, Please add some