সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি:-
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যামান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান না করায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বৌদ্ধ সমাজ।
রবিবার ( ৬ অক্টোবর) দুপুরে রাঙ্গামাটির আনন্দ বিহারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠ করেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু।।এসময় উপস্থিত ছিলেন – পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ – এর সভাপতি ভদন্ত প্রজ্ঞালংকার ভিক্ষু, বনভান্তের শিষ্য সংঘ বাংলাদেশ – এর সহ- সভাপতি সৌরজগত মহাথের, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ পরিষদ, বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক তেজপ্রিয় মহাথের,খাগড়াছড়ির ভদন্ত শাসনা রাক্ষিতা ভিক্ষু,সংঘের সভাপতি ভদন্ত সুমনা মহাথের,ত্রিরত্ন ভিক্ষু এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ – এর সভাপতি ভদন্ত আগ্গাশ্রী মহাথের,রাজ নিকায় মার্গ চিংম্রং কাপ্তাই -এর সহ- সভাপতি ভদন্ত জ্ঞানবংশ মহথের সহ তিন পার্বত্য জেলা ১৫ জন ভিক্ষসংঘে স্বাক্ষরিত এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিত দেওয়া হয়।
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের সকলকে মৈত্রী পূর্ণ শুভেচ্ছা ও সন্মান জানানো হয়,বলা হয়- আপনারা সকলে অবগত আছেন যে,গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে জৈনক ব্যক্তি মোটরসাইকেল চুরি করতে এসে জনতার হাতে ধৃত হয়ে গণপিটুনিতে শিকার হন।পর পালানোর সময় বৈদ্যুতিক হাম্বার সঙ্গে ধাক্কা লেগে মুত্যুর ঘটনা ঘটে। তথ্যটি খাগড়াছড়ি থানা ওসি মহোদয়ের বয়ানে উঠে আসে। পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি সদরে সাম্প্রদায়িক হামলা লুটপাট ও ভাংচুর চালানো হয়।সেদিন রাতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ধনরঞ্জন চাকমা, জুনান চাকমা, রুবেল ত্রিপুরাসহ তিন জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন।শতাধিক দোকানপাত লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়।
পরে ২০ সেপ্টেম্বর উক্ত ঘটনা প্রতিবাদে “সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন “ব্যানারে রাঙ্গামাটি শহরে মিছিল করা হয়। ঐ মিছিলে সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে, দুর্বৃত্তের সাথে মিশিলকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে।এক পর্যায়ে সেটা আবার সহিংস হামলা, লুটপাট এবং ভাংচুর ঘটনার রুপ নেয় এবং টা গোটা রাঙ্গামাটি শহরে সহিংসতা রুপে ছড়িয়ে পড়ে। সামপ্রদায়িক দুর্বৃত্তরা রাঙ্গামাটির পাহাড়ি আদিবাসীদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,ঘরবাড়ি, দোকানপাট ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। এমনকি, রাঙামাটির ক্যান্টনম্যান এর নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকির আনুমানিক ১০০ গজ দুরত্বে আঞ্চলিক পরিষদ অফিস হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে বিপুল পরিমাণ সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের পাশাপাশি রাঙামাটি সদরস্থ ঐতিহ্য বাহি বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মৈত্রী বিহারেও ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।পবিত্র ত্রিপিটক ছিঁড়ে পেলে এবং বুদ্ধমূর্তি ভাংচুর করে। ছোট ও মাঝারি আকারে ১০ টি পিতলের বুদ্ধমূর্তি ও দানবক্স নিয়ে যায়। এছাড়াও তবলছড়ি আনন্দ বিহারেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বুদ্ধমূর্তিতে মোড়ানো গ্লাস ভেঙ্গে সেখানকার পবিত্র বৌদ্ধমূর্তির উপর আঘাত করা হয়। শুধু তাই নয়, উক্ত ঘটনায় অনিক কুমার চাকমা (১৮) নামক এক কলেজ ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এছাড়াও —————-+++। অতীব দুঃখের সাথে বলতে হয় – এযাবৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে যতগুলো সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তার কোনোটাই সুস্থ তদন্ত ও বিচার হয়নি।কখনো কখনো সরকার লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনাকে বার বার ধামাচাপা দেওয়া হয়। পাহাড়ে চলমান সহিংসতা এবং সহিংসতা থামানোর লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ হতে কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ না দেখা এবং আইন শৃঙ্খলা চরম অব্যবস্থাপনা অবনতি দেখে আমরা সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ সমাজ এবং ভিক্ষুসংঘ খুবই উদ্বিগ ও শঙ্কিত হওয়ার চরণ নিরাপত্তাহীনতায় এবং প্রশাসনের উপর আস্থাহীনতা বোধ করছি। এইরকম চরম অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষু সংঘের আসন্ন পবিত্র ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে কোনো উৎসাহবোধ করছে না।
আপনার মতামত লিখুন :