বিজয়ের স্মরণে মুসলমানদের করনীয়


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৭, ২০২৪, ২:০৯ অপরাহ্ন / ২১
বিজয়ের স্মরণে মুসলমানদের করনীয়

মাওলানা শামীম
সাংবাদিক, ইসলামিক কলামিস্ঃ

বিজয় এবং স্বাধীনতা মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত। ইসলাম চায় সব মানুষ যেন শান্তিপূর্ণ ও স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারে। ইসলাম আমাদের এই শিক্ষাই দেয়, আমরা যেন আমাদের ভূখণ্ড তথা মাতৃভূমিকে অত্যধিক ভালোবাসি। এটাই আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.)-এর উত্তম আদর্শ। প্রত্যেক জাতিরই বিজয় আছে, মুসলিমেরও আছে বিজয়, কিন্তু মুসলিমের বিজয় নানা দিক থেকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। চিন্তা ও মূল্যায়ন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, কর্ম ও কর্মপন্থা সবদিক থেকেই মুসলমানের বিজয় ভিন্ন মাত্রার। কুরআনুল কারিমে বিজয়ের দুটো রূপ খুব স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমত স্বার্থ ও সাম্রাজ্যবাদী বিজয়ের রূপ। দ্বিতীয়ত কল্যাণ ও আদর্শবাদী বিজয়ের রূপ। প্রথমটির সমর্থনে সুরা নমলের ৩৪ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাজা-বাদশা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে তখন তা বিপর্যস্ত করে এবং সেখানকার মর্যাদাবান লোকদের অপদস্থ করে।’ কুরআনে ‘বিপর্যস্ত করে’ ও ‘অপদস্থ করে’ এই দুটি মাত্র শব্দে যে বাস্তবতা বর্ণনা করেছে, যুগে যুগে রাজ্য বিস্তার ও সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে সংঘটিত যুদ্ধ ও যুদ্ধজয়ের রূপটি তার থেকে খুব বেশি পৃথক নয়। এই যুদ্ধ ও যুদ্ধজয় যে কত জনপদ বিনষ্ট করেছে! কত মানুষের রক্তে পৃথিবী রঞ্জিত করেছে! কত নারীর সম্ভ্রম ভূলুণ্ঠিত করেছে! কিন্তু এর বিনিময়ে প্রভু বদল ও দাসত্বের পালাবদল ছাড়া মানবতা কিছুই পায়নি। মূলত এটি মানবতার বিজয় নয়, একটি সম্প্রদায়ের বিজয়।
বিজয়ের অন্য রূপের সমর্থনে পবিত্র কুরআনের সুরা হজে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি এদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা সালাত আদায় করবে, জাকাত দান করবে এবং সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর সব কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারে।’ এ হচ্ছে সত্য ও আদর্শের বিজয় এবং মানব ও মানবতার বিজয়। বিজয়ের এই রূপটিই মুসলিম জাতির। শুধু নীতিগত দিক থেকে নয়, বাস্তব ইতিহাসেও এ রূপটিই আমাদের বিজয়ের রূপ। যার বাস্তব সাক্ষী পৃথিবীর ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম বিজয়-মক্কা বিজয়।

ষষ্ঠ হিজরিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় স্বপ্ন দেখলেন, তিনি সাহাবিদের নিয়ে মক্কায় নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে প্রবেশ করছেন এবং ইহরামের কাজ সমাপ্ত করে কেউ কেউ নিয়মানুযায়ী মাথা মুণ্ডন করেছেন, কেউ কেউ চুল কাটিয়েছেন এবং তিনি বায়তুল্লাহ প্রবেশ করেছেন ও বায়তুল্লাহর চাবি তার হস্তগত হয়েছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সাহাবিদের স্বপ্নের বৃত্তান্ত শোনালেন, তখন তারা সবাই পরম আগ্রহের সঙ্গে মক্কায় যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন। সাহাবিদের প্রস্তুতি দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও সংকল্প করলেন। কেননা, স্বপ্নে কোনো বিশেষ সন বা মাস নির্দিষ্ট ছিল না। কাজেই এই মুহূর্তেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। জিলকাদ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ওমরার উদ্দেশে সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে মক্কা মুকাররমার উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং হারাম শরিফের সন্নিকটে হুদাইবিয়ায় পৌঁছে যাত্রা বিরতি করেন। কিন্তু মক্কার কাফেররা তাকে মক্কায় প্রবেশে বাধা দান করে। অতঃপর তারা এই শর্তে সন্ধি করতে সম্মত হয় যে, এ বছর তিনি মদিনায় ফিরে যাবেন এবং পরবর্তী বছর তিনি ওমরাহ করতে আসবেন। সাহাবিদের মধ্যে অনেকেই বিশেষত ওমর (রা.) এ ধরনের সন্ধি করতে অসম্মত ছিলেন। কিন্তু নবী করিম (সা.) এই সন্ধিকে পরিণামে মুসলিমদের জন্য ‘বিজয়’ লাভের উপায় মনে করে গ্রহণ করে নেন। রাসুল (সা.) যখন ওমরাহ ইহরাম খুলে হুদাইবিয়া থেকে ফেরত রওনা হলেন, তখন পথিমধ্যে একটি পূর্ণ সুরা অবতীর্ণ হয়। এতে বলা হয় যে, প্রিয়নবী (সা.)-এর স্বপ্ন সত্য এবং অবশ্যই বাস্তবরূপ লাভ করবে। কিন্তু তার সময় এখনও হয়নি। পরে মক্কা বিজয়ের সময় এই স্বপ্ন বাস্তবরূপ লাভ করে। এই সন্ধি প্রকৃতপক্ষে মক্কা বিজয়ের কারণ হয়েছিল। তাই একে প্রকাশ্য বিজয় বলে ব্যক্ত করে মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা ফাতহে (বিজয়) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।’ (সুরা ফাতহ : ১)