বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক তিন মন্ত্রীর নামে মামলা


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন / ৫৩
বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক তিন মন্ত্রীর নামে মামলা

বিশেষ প্রতিনিধি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তিন মন্ত্রী ও তাদের স্ত্রী-সন্তানের বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক ছয়টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলায় দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসেই নেওয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক পৃথকভাবে মামলাগুলো করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক, স্ত্রী শাবানা মালেক, ছেলে রাহাত মালেক, সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ হোসেন পলক ও তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও তার স্ত্রী দেওয়ান আলেয়া।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপ-পরিচালক ও মুখপাত্র আখতারুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মামলাগুলো দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জাহিদ মালেক ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্জিত ৬১ কোটি ৪২ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৬ টাকার সম্পদ অর্জন ও নিজ ভোগ দখলে রেখেছেন। তার জ্ঞাতআয়বহির্ভূত এই সম্পদ অর্জন দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি সরকারের কর্মচারী ছিলেন। তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন জ্ঞাতআয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। যার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

এছাড়া তার নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে উক্ত প্রতিষ্ঠান ও নিজ নামে ৩৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে ১৪৩ কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৭ টাকা জমা ও ১১৫ কোটি ৮৫ লাখ, ৬ হাজার ৪৬৫ টাকা তুলে হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেন করেছেন। যা দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ এর ২৭(১), মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) তৎসহ ১৯৮৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এছাড়া মন্ত্রী থাকাকালে তিনি অবৈধভাবে অর্জিত ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ১৬১ টাকা বৈধ করার লক্ষ্যে ছেলে রাহাত মালেকের নামে অর্জন দেখিয়ে নিজে ভোগ দখলে রেখেছেন। একই সঙ্গে ছেলের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ওই প্রতিষ্ঠান ও নিজ নামে খোলা ব্যাংক হিসেবে ৬৬৮ কোটি ৭১ লাখ, ১৮ হাজার ৬৬৩ টাকা জমা করেন। সেখান থেকে ৬৬৬ কোটি ৫৬ লাখ, ৬৩ হাজার ১৬২ টাকা তুলে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং আইনের অপরাধ করেছেন। ফলে রাহাত করিমের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী হয়েছেন দুদকের উপপরিচালক ফজলুল হক।

সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক দায়িত্ব পালনকালে ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪২ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখল করছেন। এছাড়া নিজ নামে ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জমা করেন ৩২ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৪ টাকা। এর মধ্যে ২৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৫ টাকা উত্তোলন করে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ করেছেন। তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন পারস্পরিক যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ স্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তার স্বামী জুনাইদ আহমেদ পলকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩৩ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে ভোগদখল করছেন।

এছাড়া তার নিজ নামে ৩১টি ব্যাংক হিসাব খুলে সন্দেহজনক ২২ কোটি ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৯ টাকা জমা করেন। এর মধ্যে ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ টাকা উত্তোলন করে হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ফলে দুজনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করা হয়েছে।

সাবেক পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তিনি জামালপুর ৩ আসনের সংসদ-সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে নিজ নামে-বেনামে এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ টাকা, মেয়ে মির্জা আফিয়া আজম অপির নামে ৩ কোটি ৯৯ লাখ, ৮৩ হাজার ৫৭ টাকা মূল্যের জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জন করে ভোগ দখল করছেন।

বিভিন্ন অবৈধ পন্থা ও দুর্নীতির মাধ্যমে এসব সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্যদের নামে ২০ কোটি ৭৩ লাখ, ৮২ হাজার টাকার সম্পদ হেবা, দান বা বিনিময়ের মাধ্যমে হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন। এছাড়া তার ও স্ত্রী দেওয়ান আলেয়াসহ স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে খোলা প্রতিষ্ঠানের মোট ৬০টি ব্যাংক হিসাবে অক্টোবর পর্যন্ত ৭২৫ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার ২৩২ টাকা জমা করেন। এরমধ্যে ৭২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ টাকা উত্তোলন করে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে তাদের অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ফলে দুজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।