ভিক্ষার অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চান কাউনিয়ার একটি প্রতিবন্ধী পরিবার


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৭, ২০২২, ১০:৩১ অপরাহ্ন / ৩৫৮
ভিক্ষার অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চান কাউনিয়ার একটি প্রতিবন্ধী পরিবার

রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর অফিস

সাইদুল, শামীম ও রবিউল তিন ভাই। তারা তিনজনই প্রতিবন্ধী। ওয়াবদা বাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। তাদের বৃদ্ধ বাবা মো. আবুল হোসেন (৬৪)। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনিও বর্তমানে অসুস্থ। বলতে গেলে ছেলেদের মতো তিনিও প্রতিবন্ধী। ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। মা নুরবানুও বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। বর্তমানে ভিক্ষা করে সংসার চলে এই ৪ প্রতিবন্ধীর পরিবারের। কিন্তু ভিক্ষার অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চান প্রতিবন্ধী আবুলের পরিবার।
কাউনিয়া উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বে তালুক শাহবাজ গ্রামে এই পরিবারের বসবাস। ঝুপড়ি ঘরে কোনো রকমে তারা বসবাস করেন।প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাদের। মনের কথা খুলে বলার সুযোগ পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান তারা। একে একে বলতে থাকে তাদের দুর্বিষহ জীবনের কথা।
বাবা মো. আবুল হোসেন (৬৪) জানান, তার প্রথম ছেলে সাইদুল ইসলাম (৩৯) সুস্থ ভাবেই জন্ম নেয়। আর আট-দশজন শিশুর মতই সুন্দর স্বাভাবিকভাবেই হাঁটাচলা, স্কুলে যাওয়া আসা পড়ালেখা সবই ঠিকভাবে চলছিল তার। কিন্তু বিধাতার নির্মম পরিহাস ১২ বছর বয়স হলে হাঁটুর ওপর এবং হাতের কনুইয়ের ওপর থেকে হাত-পা চিকন ও বাঁকা হয়ে যায় তার। সেই সঙ্গে বোধ শক্তি কমতে থাকে এক পর্যায়ে বিকলাঙ্গ হয়ে যায় তার হাত পা। শরীরের মাংস শুকিয়ে হাড়ের সঙ্গে লেগে যায়। সবার কাছে হাত পেতে সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করেন তারা। কিন্তু কোনো ফল পাননি তিনি।
এরপর জন্ম নেয় দ্বিতীয় ছেলে শামীম মিয়া (২৫)। তারও ১২ বছর বয়স হলে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এরপর তৃতীয় ছেলে রবিউল ইসলামে (২১) ১৩ বছর বয়স হলে একই পরিণতি ঘটে। দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করেও তাদের আর স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, স্ত্রী আর প্রতিবন্ধী সন্তানদের মুখে দুবেলা দুমুঠো ডাল ভাত তুলে দিতে বাবা আবুল হোসেন রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। স্থানীয় কুর্শা এলাকায় কাজে গিয়ে দুই তলা বিল্ডিংয়ের ওপর থেকে পড়ে যান তিনি। এসময় তার দুই পা ভেঙে যায়। কবিরাজি চিকিৎসা নিয়ে কোনো রকম দাঁড়াতে পারলেও কোনো শক্তি দিয়ে কাজ করতে পারেন না তিনি। বর্তমানে বাড়ির কাছে ওয়াপদা বাঁধে ছোট এক পানের দোকান দিয়েছেন তিনি। সেখানে তেমন আয় হয় না বললেই চলে। তিন শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলের সংসার জীবন চলছে বিভিন্ন হাট-বাজার ও রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষা করে।
অসহায় বাবা মো. আবুল হোসেন আরও জানান, তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে সাইদুল নানা রোগে আক্রান্ত। মানুষের সাহায্য ছাড়া সে একাকী চলাফেরা করতে পারে না। ভিক্ষা বৃত্তি আর সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতায় কোনো রকম দিন চলছে তাদের। এছাড়া তার নিজস্ব জমি জমা বলতে কিছুই নেই। এর মধ্যে সাইদুল ইসলাম ও শামীম মিয়া বিয়ে করেছেন। সাইদুলের ঘরে ২ সন্তান আর শামীমের ঘরে ১ সন্তান। পরবর্তীতে তাদের সন্তানদের ভাগ্যেও একই পরিণতি ঘটতে পারে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আক্ষেপের সঙ্গে আবুল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার এই দুর্ভাগা জীবনে জোটেনি সরকারিভাবে থাকার ঘর। সরকার বা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি আমাদের একটা থাকার ঘর দিতো তাহলে প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে একটু ভালো থাকতাম। আর জীবিকা নির্বাহের জন্য চার্জারচালিত অটোরিকশা চাই আমি। অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে সেই আয় রোজগার থেকে আমার সংসার চলতো।’ ভিক্ষার অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চান আবুল হোসেন তার অসুস্থ স্ত্রী নুরবানু বেগম।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছা. তাহমিনা তারিন জানান, খবর পেয়ে আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করে শীতবস্ত্র ও খাবার দিয়ে এসেছি। এছাড়া তাদের জন্য কাউনিয়ায় সরকারিভাবে তিনটি ঘর বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে তাদের আর্থিকভাবে কিছু সাহায্য করা যায় কিনা বিষয়টি দেখা হচ্ছে।


There is no ads to display, Please add some