[gtranslate]

মরুভূমির ফল সাম্মাম চাষ:পুষ্টিগুণ ও বাংলাদেশে সম্ভাবনা


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ৮:২৬ অপরাহ্ন / ৯৫
মরুভূমির ফল সাম্মাম চাষ:পুষ্টিগুণ ও বাংলাদেশে সম্ভাবনা

সরকার মো. আবুল কালাম আজাদ-

বাংলাদেশের কৃষি এখন বহুমুখী ও উদ্ভাবনী ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। আগে যেসব ফসল কেবল মরুভূমি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল, আজ তা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের দেশেও চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। এরই একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে “সাম্মাম” (Sammam)-মরুভূমির এই ফল এখন বাংলাদেশের কৃষকদের নতুন আয়ের উৎস হতে পারে।

সাম্মাম কী?
সাম্মাম মূলত এক ধরনের মেলন ফল (Cucumis melo) যা দেখতে অনেকটা খরমুজ বা ক্যান্টালুপের মতো। এটি আরব দেশগুলোতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সৌদি আরব, ওমান, কুয়েত, মিশর প্রভৃতি দেশে এটি গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে ব্যাপক ভাবে খাওয়া হয়। গরম ও শুষ্ক পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা থাকায় একে “মরুভূমির ফল” বলা হয়।
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাম্মাম চাষের উপযোগিতা: যদিও বাংলাদেশ মরুভূমি নয়, তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও বেলে দোআঁশ মাটিযুক্ত এলাকায় গ্রীষ্ম মৌসুমে সাম্মাম চাষ বেশ উপযোগী। বর্তমানে রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বরিশাল, চাঁদপুর ও কক্সবাজার অঞ্চলে পরীক্ষামূলক ভাবে সাম্মাম চাষ সফল হয়েছে।

উপযুক্ত পরিবেশ:
তাপমাত্রা: ২৫–৩৫° সেলসিয়াস
মাটি: দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ
পানি নিষ্কাশন: ভালো হলে ফলন বেশি হয়
সময়: ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রোপণ উপযুক্ত

চাষ পদ্ধতি:
বীজ বপন: প্রতি গর্তে ২–৩টি বীজ বপন করতে হয়।
চারা পরিচর্যা: ১০–১২ দিন পর দুর্বল গাছ তুলে ফেলতে হয়।
সার প্রয়োগ: জৈব সার, ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি পরিমিত ভাবে দিতে হয়।
সেচ ও আগাছা দমন: শুকনো মৌসুমে ৫–৭ দিন পরপর সেচ দিতে হয়।
রোগবালাই: পাউডারি মিলডিউ ও ফল পচা রোগ দেখা দিলে তামার ছত্রাকনাশক প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
ফল সংগ্রহ: ফুল ফোটার ৩০–৩৫ দিন পর ফল সংগ্রহ উপযুক্ত হয়।

সাম্মামের পুষ্টিগুণ: সাম্মাম শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ
ভিটামিন A ও C ত্বক ও রোগপ্রতিরোধে সহায়ক প্রচুর পানি থাকায় দেহ ঠান্ডা রাখে ফাইবার হজমে সাহায্য করে পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ক্যালোরি কম হওয়ায় ডায়েট উপযোগী কৃষকের লাভজনক দিক:

বাংলাদেশে সাম্মাম চাষে কৃষকরা এখন নতুন আশার আলো দেখছেন। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় প্রায় ৪–৫ টন ফল
বাজারদর (মৌসুমে) প্রতি কেজি ৮০–১২০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায় এক বিঘা চাষে খরচ প্রায় ২৫–৩০ হাজার টাকা, কিন্তু বিক্রিতে আয় হয় প্রায় ৮০–৯০ হাজার টাকা
অর্থাৎ নিট লাভ প্রায় ৫০–৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত
এছাড়া এটি গ্রীনহাউজ বা ছাদ কৃষিতেও সহজে করা যায়, ফলে শহরাঞ্চলের উদ্যোক্তাদের কাছেও এটি লাভজনক একটি ফসল।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ও খরা সহনশীলতার প্রেক্ষাপটে সাম্মাম চাষ একটি টেকসই বিকল্প ফসল হতে পারে। রপ্তানি সম্ভাবনাও উজ্জ্বল, কারণ মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষি গবেষক ও উদ্যোক্তারা বলছেন সাম্মাম হতে পারে বাংলাদেশের “গ্রীষ্মকালীন রপ্তানি যোগ্য ফল”। মরুভূমির ফল সাম্মাম এখন আর কেবল আরব দেশের সীমিত ফসল নয়। বাংলাদেশের মাটিতেও এটি সফল ভাবে চাষ সম্ভব, যদি আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ও সঠিক বাজার সংযোগ গড়ে তোলা যায়। সাম্মাম চাষ কেবল নতুন ফসল নয়, বরং এটি হতে পারে বাংলাদেশের কৃষির এক নতুন সাফল্যের গল্প।

লিখক-কেন্দ্রীয় সভাপতি: বাংলাদেশ পেশাজীবী ফেডারেশন, কৃষি লেখক ও কথক: বাংলাদেশ বেতার।