নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধোরসা কোটালীপাড়া গ্রামে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগে স্বামী মাহমুদ হাসান ইনসানকে গ্রেপ্তার করেছে মোহনপুর থানা পুলিশ।
আসামী মাহমুদ জাহানাবাদ ইউপি ধোরসা কোটালীপাড়া গ্রামের আফছার আলীর ছেলে। এঘটনায় তার মা ও বাবা পলাতক রয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। শনিবার (৬জুলাই) সকালে ওই গৃহবধূর কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন তার স্বামী মাহমুদ হাসান ইনসান ও তার শাশুড়ী জাহেদা বেগম (৫৬) ও শশুর মোঃ আফছার আলী। এতে আপত্তি জানালে ওই গৃহবধূর ওপর সবাই মিলে শারীরিক নির্যাতন চালান।
এসময় গৃহবধূর ডাক চিৎকারে স্থানীয় লোকজনসহ তার আত্মীয় স্বজন ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য
হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) ভর্তি করেন।
চিকিৎসা শেষে সোমবার (৮জুলাই)
ওই গৃহবধু বাদি হয়ে মোহনপুর থানায় স্বামী, শাশুড়ী ও শশুরের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তের বছর আগে ২০১১ সালে জাহানাবাদ ইউপি ধোরসা কোটালীপাড়া গ্রামের আফছার আলীর ছেলে মাহমুদ হাসান ইনছানের সাথে ধুরইল ইউপি’র ধুরইল গ্রামের নুরুল হুদার মেয়ের বিয়ে হয়।
এরপর থেকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে বিভিন্ন সময় টাকাপয়সা আনার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ওই গৃহবধূ বাবার কাছ থেকে কয়েক দফায় তিন লাখ টাকা এনে দিয়েছেন। তার পরেও বছরখানেক পর আবারো শুরু হয় নির্যাতন।
ওই গৃহবধূর স্বামী মাহমুদ হাসান ইনসান পড়াশোনা শেষে ওই গৃহবধূকে নিয়ে রাজশাহী শহরের কোর্ট এলাকায় কোচিং সেন্টার ব্যবসা শুরু করেন। এসময় স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর সাথে সে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে এলাকাবাসীর উত্তম মধ্যম খেয়ে জরিমানা দিয়েছেন অনেক টাকা। এঘটনার পর তার কোচিং ব্যবসায় ধ্বস নামে। এরপর বিভিন্ন এনজিও হতে
স্ত্রীর ব্যাংকের চেক দিয়ে স্ত্রীর নামে ঋন তোলেন দুই লাখের বেশি টাকা। ঋনের টাকা মাদক সেবনসহ বিভিন্ন জায়গায় শেষ করে ৫মাসের বাড়িবাড়া বাকি রেখে কয়েক মাস আগে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে চলেন আসেন বাবার বাড়িতে। এভাবেই বছরের পর বছর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলেন ওই গৃহবধূ। এনিয়ে নিজেদের আত্মীয় স্বজনের মাঝে কয়েকবার সালিশ দরবারও হয়েছে। তাদের সংসারে আট বছর বয়সি এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
সবশেষ শনিবার (৬ জুলাই) সকালে ওই গৃহবধূর কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন তার স্বামী, শাশুড়ী ও শশুর। এতে আপত্তি জানালে ওই গৃহবধূর ওপর সবাই মিলে শারীরিক নির্যাতন চালান।
খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ওই গৃহবধূর দুই মামি ও তার মা মেয়েকে উদ্ধার করে। চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) ভর্তি করেন।
চিকিৎসা শেষে ওই গৃহবধূ মোহনপুর থানায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
ওই গৃহবধূ বলেন, সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামীর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন সহ্য করে সংসার করে আসছি। কিন্তু আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের অমানবিক নির্যাতন বন্ধ হয়নি। যৌতুকের জন্য প্রায়ই তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। ঋণ শোধের নামে নামে দুই লাখ টাকার জন্য শনিবার সকালে আমাকে প্রচণ্ড মারপিট করে আমার ডাক চিৎকারে স্থানীয় দুই মামি ও নানার বাড়িতে বেড়াতে আসা আমার মা আমাকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরিদাস মন্ডল বলেন, যৌতুক দাবি করে গৃহবধুকে নির্যাতনের ঘটনার মামলায় মাহমুদ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে মোহনপুর থানা পুলিশ। আসামীর মা ও বাবা পলাতক রয়েছে। আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :