মো. শাহীন আলী,
আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন আমার ছোট বোনের বান্ধবী একটা ভাঙ্গা রেডিও’র বোর্ড নিয়ে আমাদের বাড়িতে ঘোরাফেরা করছিলো। হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম রেডিওতে থাকা একটা পার্টস যার নাম পিএফ অর্থাৎ মসুর ডালের মত যেটাকে দেখা যায়, সেই পার্টসটি খেলার ছলে কানের দুল হিসাবে কানের ঝুলিয়ে রেখেছে। তো সেটা দেখে আমি তার সাথে খুব মজা করলাম। হঠাৎ তার কাছে ভাঙা রেডিও’র এই বোর্ডটি দেখে আমি তার কাছ থেকে সেটি খুব আকুতি মিনতি করে নিয়ে নিলাম এবং সেই বোর্ড দিয়ে আবারো রেডিও বানানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সেই রেডিওটি বানাতে সফল হতে পারলাম না।
তাই সেটা নিয়ে বাজারে এক রেডিও মেকানিককে কোন রকম চালু করে দিতে বললাম। তো তিনি আমাকে বললেন এটা কিভাবে বাজাবে? এটার তো বডি নেই, আমি বললাম কাকা যে ভাবেই হোক শুধু বোর্ডটা চালু করে দিন, আমি এভাবেই বাজাবো। তো মেকানিক কাকা আমাকে সেটা মেরামত করে দিতে রাজি হল আর বলল এটা করার জন্য তাকে ২০ টাকা দিতে হবে। আমি রাজি হয়ে গেলাম এবং তিনি আমাকে বললেন এক সপ্তাহ পরে আসতে।
অনেক কষ্ট করে ২০ টাকা জোগাড় করে এক সপ্তাহ পরে সেই বোর্ডটি আনার জন্য বাজারে মেকানিক্স এর কাছে গেলাম, তিনি আমাকে বললেন ৫০ টাকা খরচ হয়েছে বিশ টাকায় হবে না, আরও ৩০ টাকা দিতে হবে। আমি তো মহা বিপদে পড়ে গেলাম ২০ টাকায় জোগাড় করতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে, সেখানে আরও ৩০ টাকা কিভাবে যোগাড় করি। তাই তাকে বললাম কাকা আমি আর এক টাকাও দিতে পারব না আমার ওইটা ফেরত দিয়ে দেন।
কিন্তু তিনি আমাকে বললেন এর পিছনে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি ৫০ টাকা দিয়ে নিয়ে যাও আর না হলে এটা আমি দিতে পারবো না। আমি অনেক আকুতি মিনতি করলাম কিন্তু তিনি আমাকে সেটা দিতে রাজি হলেন না। এক পর্যায়ে মনে অনেক কষ্ট নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম আর মনে মনে ভাবলাম যে করেই হোক একটা নতুন রেডিও কিনবো।
এখন মনে মনে এটাই ভাবি যে সেই সময় আর এই সময়ের মধ্যে কত পার্থক্য। এখন আমি ইচ্ছা করলেই অনেক রেডিও কিনতে পারি কিন্তু বাজারে রেডিও পাওয়া যায় না। তারপরেও সংগ্রহশালায় প্রায় ৮টি সচল রেডিও আছে।
সবগুলো রেডিও আমার সন্তানদের মতো আমি যত্ন করে রাখি মাঝে মধ্যে সেগুলো পরিষ্কার করি।
আর এই রেডিওগুলো পরিষ্কার করা দেখলে অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, তাদেরকে কিভাবে বোঝাই রেডিও শুধু রেডিও নয়, এটা একটা আবেগ। যে আবেগটা আমার মত রেডিও প্রেমি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।
তাই যত দিন বাঁচবো সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে রেডিও’র সাথেই থাকবো।
মো. শাহীন আলী,
সভাপতি, পদ্মা বেতার শ্রোতা ক্লাব
গ্রাম-পশ্চিমব ভবদিয়া, পোস্ট-ভবদিয়া
থানা-রাজবাড়ী সদর, জেলা-রাজবাড়ী।
আপনার মতামত লিখুন :