ডেস্ক রিপোর্ট
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামি চিন্তাবিদ, মুনাযীরে আযম, বাহরুল উলুম, উস্তাযুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, শায়খুল হাদীস, মুফতিয়ে আযম, পীরে কামিল, হযরত আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব কিবলাহ রাহমতুল্লাহ আলাইহির চতুর্থ বার্ষিক ঈসালে সাওয়াব মাহফিল গত বুধবার লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ব্রিকলেন জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আল্লামা দুবাগী রাহমতুল্লাহ আলাইহি ঈসালে সাওয়াব মাহফিল কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন তাঁর বড় ছাহেবজাদা আল্লামা জিল্লুর রহমান চৌধুরী। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন দুবাগী ছাহেবের ছোট ছাহেবজাদা ক্বারী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।
মাহফিলে দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত পীর-মাশায়িখ, আলিম-উলামা এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে হযরত আল্লামা দুবাগী রাহমতুল্লাহ আলাইহির মুরীদীন, মুহিব্বীন ও সর্বস্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
আল্লামা দুবাগী ছাহেবের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, মিনহাজুল কোরআন ইন্টারন্যাশনাল লন্ডন এর ডাইরেক্টর আল্লামা সাদিক কোরেশী আল-আজহারী; মুহিউল ইসলাম মসজিদের খতীব আল্লামা শের আহমদ বারকাতি; ইউকে আঞ্জুমানে আল-ইসলাহর সাবেক সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল জলিল, লন্ডন নিউক্রস জামে মসজিদের খতিব মাওলানা অলিউর রহমান চৌধুরী ছাহেবজাদায়ে দুবাগী; ফাইজানে ইসলাম মসজিদের খতীব আল্লামা সানাউল্লাহ ছেটি; আল-হীরা মসজিদের খতিব আল্লামা ক্বারী তারিক মাহমুদ; যুক্তরাজ্য আঞ্জুমানে আল-ইসলাহর সভাপতি মাওলানা নজরুল ইসলাম; লন্ডন মাজাহিরুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা এমদাদুর রহমান আল-মাদানী; দুবাগী সাহেবের নাতি মাওলানা মুহিউস-সুন্নাহ চৌধুরী আল-আজহারী; খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদির সালেহ; লন্ডন দারুল হাদিস লতিফিয়ার সাবেক প্রিন্সিপাল মুফতি ইলিয়াস হোসেন; বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইকরা টিভি লন্ডনের আলোচক মুফতি আব্দুল মুন্তাকিম, লন্ডন বায়তুল আমান মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল মালিক, লেস্টার দারুস সালাম মসজিদের খতিব হাফিজ মাওলানা আব্দুল জলিল, উলামা পরিষদ বিয়ানীবাজারের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আমিনুল ইসলাম জলঢুপী; আছিরগঞ্জ মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাওলানা আব্দুস সবুর; বাংলাদেশি ইসলামিক সেন্টার, লজেলস, বার্মিংহাম এর ইমাম ও খতিব, মাওলানা হুসাম উদ্দিন আল-হুমাইদি; বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লন্ডন বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইম্পিরিয়াল কলেজের প্রফেসর ডঃ হেলাল আহমদ; লন্ডন আল-ইসলাহ ডিভিশনের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, হাফিজ খায়রুল ইসলাম ও ক্বারী গোলাম আজম প্রমুখ।
মাহফিলে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুফতি সৈয়দ মাহমুদ আলী, হাফিজ নাজিম উদ্দিন, হাফিজ মাওলানা মারুফ আহমদ, মাওলানা আলী আহমদ, হাফিজ মতিউল হক, হাফিজ আব্দুল্লাহ, হাফিজ সাজ্জাদুর রহমান, মাওলানা মনোয়ার হোসেন, মাওলানা গোলাম আম্বিয়া, মাওলানা হাবিবুর রহমান, ক্বারী সুফিয়ান বিল্লাহ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সুদীর্ঘ প্রায় অর্ধ-শতাব্দীকাল যাবত একটানা বিলাতে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে গৌরবময় ও আলোকিত একটি নাম হযরত আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী রাহমতুল্লাহ আলাইহি। তিনি ছিলেন একজন মহান ইসলামি চিন্তাবিদ, মুবাল্লিগ, বিদগ্ধ লেখক, নন্দিত বক্তা ও তরীকতের একজন শ্রেষ্ঠ বুযুর্গ ও উচুস্তরের একজন ওলীআল্লাহ।
তিনি ইলমি অঙ্গনের সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ছিলেন। তাঁর গভীর পাণ্ডিত্ব এ যুগে সত্যিই বিরল। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁকে বাকশক্তি ও লেখনীশক্তি দুটোই দান করেছিলেন। দ্বীন-ইসলামের প্রচার ও প্রসারে এই দুই মাধ্যমকেই তিনি আজীবন কাজে লাগিয়েছেন। হযরত আল্লামা দুবাগী (রহ.) ইসলামি জ্ঞান বিস্তারে গ্রন্থ রচনা ও গবেষণায় তিনি সারা জীবন অতিবাহিত করেন। কোরআন, হাদিস, দাওয়াত, তাসাউফসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলী বিশ্বজুড়ে বহুল প্রসিদ্ধ। তাঁর মেধা ও মননের বহুমাত্রিকতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে ইসলামের খিদমতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন পুরো জীবন। কর্মজীবনে বাংলাদেশে অবস্থানকালীন বিভিন্ন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেন। তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ, শায়খুল হাদীস ও মুফতী হিসাবে ইলমে দ্বীনের খিদমত করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় অগণিত আলেমেদ্বীন সৃষ্টি হয়েছেন। বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে তিনি আরব বিশ্বসহ বহির্বিশ্বে সুনাম খ্যাতি অর্জন করেছেন। বৃটেনে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা প্রচারে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। গণমানুষের ঈমান-আক্বিদা সুরক্ষায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে তাঁর প্রেরণা ও নির্দেশনায় বহু মসজিদ ও ইসলামি সেন্টার এবং খানকাহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ১৯৮০ সালে লেস্টার শহরে “ইউকে আঞ্জুমানে আল ইসলাহ” প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি গ্রেট ব্রিটেনের উল্লেখযোগ্য প্রতিটি শহরে বিভিন্ন মাহফিলের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের মহান দায়িত্ব পালন করেছেন।
পীরে কামিল আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব (রহ.) ছিলেন সুন্নতে নববীর মূর্ত প্রতীক। তিনি আলিমে বা-আমল ও ইবাদতগুজার বান্দা ছিলেন। দারস-তাদরীস ও কিতাব অধ্যয়নে দিন-রাতের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করতেন। নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত, যিকির আযকার ও শেষ রাতে তাহাজ্জুদে নিমগ্ন হতেন। একজন মুমিনের জন্যে যত উন্নত গুণাবলি থাকা প্রয়োজন তাঁর মাঝে এসবই ছিল। তিনি ছিলেন একজন সাচ্চা আশেকে রাসূল (সা.)। দৈনন্দিন জীবনে এক একটি সুন্নত পালন ও বাস্তবায়নের উপর অত্যন্ত তাগিদ দিতেন। দূরুদ শরীফ পাঠের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। তাঁর জীবন দর্শন ছিল, মানুষের অন্তরে হুব্বে রাসূল (সা.) জাগ্রত করা। এজন্য প্রতিটি মাহফিলে তিনি রাসূলের আজিম শান ও মানের আলোচনা করতেন। নবীজির প্রতি সহিহ আকীদা পোষণের গুরুত্ব আরোপ করতেন। এজন্য তাঁর জীবনে আকাবীরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি দেখা যেত। তিনি সুন্নাতকেই তরীকত বলে বিশ্বাস করতেন। উঠা-বসা, চলা-ফেরা, আহার ও নিদ্রাসহ দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি সুন্নাতের পরিপালন করতেন। যাদের হৃদয়ে হুব্বে রসূলের আলো জ্বলতে দেখতেন তাদের অত্যন্ত স্নেহ করতেন। উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে তাদের সামনে অগ্রসর হতে বলতেন। তিনি মানুষদেরকে বাহ্যিক চাকচিক্যের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে সত্য-সঠিক সিলসিলায় আশ্রয় গ্রহণ করার আহবান জানাতেন। তাঁর ইলম, ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক প্রভাবে বহু মানুষের জীবন ধারায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তাঁর ওয়াজ ও নসীহতে শিরক, বিদআত, সুন্নাত, ইবাদত, আখিরাত, আমল, আখলাক, সমাজসেবা সম্পর্কীয় বিষয়াবলী প্রাধান্য পেত। যে কারণে দলমত নির্বিশেষ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল অসাধারণ। তিনি তাঁর জীবনকে দ্বীনের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে বিলিয়ে দিয়েছেন। সমাজের অসহায়-দুঃস্থ মানুষের সেবায় তাঁর রয়েছে বহুবিধ খিদমত। আল্লামা দুবাগী ছাহেব রাহমতুল্লাহ আলাইহি এর চেহেরার মধ্যে এমন একটা উজ্বলতা ছিল যে, তাঁর দিকে তাকালে স্বভাবতই মনের মধ্যে একটা শ্রদ্ধা জাগ্রত হত এবং মহান আল্লাহ্ পাকের কথা স্বরণে আসত।
এ মহতী অনুষ্ঠানে মীলাদ পাঠান্তে দোয়া পরিচালনা করেন দুবাগী ছাহেবের সুযোগ্য বড় ছাহেবজাদা আল্লামা জিল্লুর রহমান চৌধুরী দুবাগী। সর্বশেষে শিরনি বিতরণের মাধ্যমে মাহফিল সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :