রাজু রহমান, শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি-
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, আবাসিক প্রকল্প, নগরায়ন ও নতুন নতুন জনপদ সৃষ্টিতে ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। তৈরী হচ্ছে বসতবাড়ী, হাটবাজার, মার্কেট, সরকারী বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান, এন.জি.ও, সামাজিক সংগঠন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা, ইট ভাটা, চাতাল, প্রসেস মিল, অটোরাইসমিল, কোল্ড স্টোরসহ নানা প্রতিষ্ঠান, যার সব গুলোই তৈরী হচ্ছে আবাদি জমির উপর। কমে যাচ্ছে চাষের জমি, ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে ব্যাপক হারে। সেই সাথে বেড়েই চলেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
শার্শা থানার ১১ টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেলো বিভিন্ন স্থানে তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন রাস্তা। রাস্তার দুইপাশে নির্মিত হচ্ছে এই সমস্থ প্রতিষ্ঠান, পাল্লা দিয়ে জমি ক্রয় করছে এন.জি.ও প্রতিষ্ঠান গুলো। কিছু দিন আগেও যত দূর চোখ যেত চোখে পড়ত সবুজ ফসলের মাঠ। কিন্তু এখন মাঠের দিকে তাকালে চোখে পড়বে নতুন নতুন ভবন। ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বললে তারা বলেন অপরিকল্পিত ভাবে গৃহায়ন, হাটবাজার, মিল ফ্যাক্টরী, তৈরী হওয়াতে আবদি জমির উপর ব্যাপক হারে চাপ পড়ছে। সাথে সাথে বাড়ছে জনসংখ্যা এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছর পর আবাদি জমি খুজে পাওয়া দূস্কর হয়ে পড়বে।
কৃষি জমিতে বসত বাড়ি তৈরী করছে এমন একজন সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার ৪ টি ছেলে সবার সংসার পৃথক হওয়ায় নতুন বসত বাড়ী তৈরী করতে হচ্ছে ফলে আমার আবাদি জমি প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে এসেছে।
শার্শার ভূমি অফিস জানায়, ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী শার্শা উপজেলার মোট আয়তন ৩৩৬,৩৬ বর্গ কিলোমিটার।এর মধ্যে মোট কৃষি জমি ৩৩,৬৪২,১৯ হেক্টর, মোট আবাদি জমি ২৯২৮০ হেক্টর, ফল বাগান ও বনজ ১০০ হেক্টর, মোট মৌসুমী আবাদি জমি ২৮,২৪০ হেক্টর, এক ফসলি জমি ৫২৩ হেক্টর, দো-ফসলি জমি ১৪,১২৪ হেক্টর, তে- ফসলি জমি ১৩,৯৯৩ হেক্টর, তিনের অধিক ফসলি জমি ৬০০ হেক্টর।
গত ৪/৫ বছরে আবাদি জমি ব্যাপক হারে কমতে শুরু করেছে। কোন নিয়মনীতি না থাকায় আইন অমান্য করে এসব প্রতিষ্ঠান তৈরী হচ্ছে। সরকারী ভাবে এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে আবাদি জমির পরিমান কমে গেছে কয়েক হাজার একর। এক দিকে যেমন ফসলের জমি নষ্ট হচ্ছে অন্য দিকে অপরিকল্পিত ভাবে মিল কল কারখানা হওয়ায় পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে। বাড়ছে জনসংখ্যা বাড়ছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা চাহিদা, যার সবটাই আসে জমিতে উৎপাদিত পন্য থেকে। কিন্তু যে হারে জমি কমে যাচ্ছে সেই হারে জনসংখ্যা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এসব বিষয়ে আনতে চাইলে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, মানুষ বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের চাহিদা ও বৃদ্ধি পাবে। মানুষের চাহিদা পুরণে আবাদি জমির উপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে, কিন্তু একটা সঠিক নীতিমালা থাকলে আবাদি জমির উপর এত বেশি প্রভাব ফেলতো না। আমরা যথাযথ চেষ্টা করবো আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার।
এলাকাবাসী মনে করছেন, যদি এই ভাবে চলতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে চাষী জমির আরো সংকট হবে। এবং খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। সরকারী ভাবে একটি নীতিমালা তৈরী হওয়া উচিৎ এবং তা বাস্তবায়ন করলে এই সমস্যার কিছুটা হলে সমাধান হবে।
আপনার মতামত লিখুন :