আহম্মদ ফজলুর রহমান মুরাদ
নতুন ভূখণ্ড নিয়ে নতুন দেশ গঠন এটা অলিক কল্পনা বলেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। পূর্ব তিমুর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইন্দোনেশিয়া থেকে পৃথক হয়ে আলাদা দেশ হয়েছে। বার্মা নিশ্চয় ইন্দোনেশিয়ার মত শক্তিশালী দেশ নয়? দক্ষিণ সুদান পৃথক হয়েছে সুদান থেকে। রাশিয়া তো কয়েক বছর আগে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করেছে মার্কিন ও ইউরোপীয়দের চোখ রাঙিয়ে। ইউক্রেনও কোন দুর্বল রাষ্ট্র নয়। সুপার পাওয়ারদের কাছে কে এগিয়ে; বাংলাদেশ নাকি বার্মা?তাই যদি বাংলাদেশের সত্যিকার ইচ্ছে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের যদি সত্যিকারের স্বার্থ থাকে; তবে বার্মা তাদের দেশকে অখণ্ড রাখতে পারবে না। তবে বাংলাদেশও কি পারবে??
রাখাইন বার্মার একটি প্রদেশ, বার্মার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। এর উত্তরে চীন, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর-পশ্চিমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ। আরাকান পর্বত, যার সর্বোচ্চ চূড়া ভিক্টোরিয়া শৃঙ্গের উচ্চতা ৩,০৬৩ মিটার যা রাখাইন প্রদেশকে মূল বার্মা থেকে পৃথক করে রেখেছে। রাখাইন রাজ্যের আয়তন ৩৬,৭৬২ বর্গকিলোমিটার এবং এর রাজধানীর নাম সিত্তে। বাংলাদেশের আয়তন ৫৫ হাজার বর্গমাইল যেখানে রাখাইন বা আরাকান রাজ্যের আয়তন ১৪,১৯৪ বর্গমাইল বা ৩৭ হাজার বর্গকিলোমিটার । যেটা বাংলাদেশের চার ভাগের একভাগের থেকেও বেশি। রাখাইনের জনসংখ্যা ৪১ লক্ষ এবং বার্মার সব থেকে দরিদ্র অঞ্চলগুলির একটি। যদিও রাখাইনের সাথে সমুদ্রসীমা যতটুকু তা প্রায় বাংলাদেশের মোট সমুদ্রসীমার কাছাকাছি। আর এই বিষয়টি রাখাইনকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
ইতিপূর্বেই আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্র
উল্লেখ্য, এটা দিয়ে যে বার্মার সাথে কোন যুদ্ধে ‘আমেরিকা’ সহায়তা দিতে চেয়েছে সেটা বুঝতে বাকি থাকে না। কারণ আমেরিকার কংগ্রেসম্যান ইতিমধ্যে বলেছেন, রাখাইনকে স্বাধীন বা বাংলাদেশের সাথে যুক্ত করে দিতে।
কিন্তু রাখাইনে চীনের যেমন স্বার্থ রয়েছে ঠিক তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থও রয়েছে। কারণ যেখানে চীন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রও থাকার চেষ্টা করবে। এত দীর্ঘ সমুদ্রসীমা রাখাইনকে কার্যত বঙ্গোপসাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাধ্যমে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের সাথে যদি রাখাইন যুক্ত হতো তবে বঙ্গোপসাগরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই থাকত। তাতে বার্মাকে পড়ত হতো সঙ্কটে। কারণ বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত তাদের প্রধান রাজ্য হল রাখাইন। এই রাজ্য হারালে কার্যত বঙ্গোপসাগরে তাদের নিয়ন্ত্রণ শূন্যের কোঠায় দাঁড়াতো।
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা গুরুতর সমস্যা। কিন্তু মনে হয় না মিষ্টি কথায় এর কোন সমাধান খুব শীঘ্রই হচ্ছে। তাই বার্মার সাথে মিষ্টি কথা বাদ দিয়ে একটু শক্তি প্রদর্শন জরুরি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নিতে পারতো। চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ নয়। বরং চীনা বিনিয়োগ বার্মার থেকে বাংলাদেশে বহুগুণ বেশি। তথাপি চীনকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে খুব বেশি টলানো যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সংযুক্তি চীনকে এই ইস্যুতে নতুন ভাবে অবস্থান নিতে বাধ্য করতো।
যেহেতু সামরিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার্মাকে ভীত করার মত অবস্থানে নেই এবং বার্মাও বাংলাদেশকে ভীত করার মত অবস্থানে নেই, সেক্ষেত্রে চীনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলার জন্য আহবান জানানো যেতো।
বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ আসলেই যে তারা বাংলাদেশ দখল করে নিবে এমন কিছু নয়। এখানে তেল নেই। তাই এখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ তেলের জন্য না। বরং বঙ্গোপসাগরে চীনের প্রভার কমিয়ে মার্কিন প্রভাব বৃদ্ধি করা হলো যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য।
এখানে বলে রাখা ভাল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বড় সামরিক মহড়া এবং বার্মা সীমান্তে প্রকাশ্যে ভারি অস্ত্রের সমাবেশ এবং দুই চারটা কড়া হুমকি দিলে বার্মাকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করা যেত। হুমকি যা দেবার জাতিসংঘ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে। এখন হুমকির বাস্তবতা ধরে রাখতে সামরিক উপস্থিতি জরুরি। যেটা বাংলাদেশের একার পক্ষে সম্ভব না। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা এটা সম্ভব ছিল। এরকম কিছু করলে চীন বাংলাদেশকে একপাক্ষিক ভাবে দোষ চাপাতে পারতো না। কারণ আমরা চীনকে আগেই বলে রেখেছি এই ইস্যু সমাধান করার জন্য। অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের কথা চিন্তা করেও চীন তার অবস্থান পরিবর্তন করা দরকার ছিল।
সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, আমাদের দেশের উপর গনতন্ত্র ও মানবাধিকার লংঘন নিয়ে বিভিন্ন জনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ কি শুধুই এসব কারণে নাকি এর পিছনে ভূ-রাজনৈতিক কোন কারণ আছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় শুধু রাখাইন রাজ্য নাকি এরসাথে বাংলাদেশের একটি এলাকাকেও এর সাথে যুক্ত করতে চায়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চাপে কি বর্তমান সরকার নতি স্বীকার করে এজাতীয় কোন সিদ্ধান্তের সাথে একমত হবে?? আমাদের দেশের জনগণকে বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষা করতে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকারের যে দুর্বল অবস্থান যে সরকারের পক্ষে শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে আপোষ করা বিচিত্র নয়।আর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এটা বুঝতে পেরেই বর্তমানের জন আস্থাহীন সরকারের বিরুদ্ধে এজাতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন রুখতে জাতীয় ঐক্য মতের দরকার কোন একক দলীয় সরকারের পক্ষে এটা রোধ করা সম্ভব নয়।।
আপনার মতামত লিখুন :