সিলেটে অস্ত্রের মুখে ২৪ লাখ টাকার চিনি ছিনিয়ে নিল ছাএলিগ


প্রকাশের সময় : জুন ১১, ২০২৪, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন / ৭৮
সিলেটে অস্ত্রের মুখে ২৪ লাখ টাকার চিনি ছিনিয়ে নিল ছাএলিগ

এম এ রশীদঃ
সিলেটে অস্ত্রের মুখে ২৪ লাখ টাকার চিনি ছিনিয়ে নিল ছাত্রলীগ!
জব্দ করা ভারতীয় চিনির ট্রাক।
সিলেটে এবার সরকারি নিলাম ডাকে বিক্রি হওয়া চিনি অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সীমান্ত উপজেলা বিয়ানীবাজারে সরকারি নিলাম ডাক থেকে কেনা ২৪ লাখ টাকার চিনি ব্যবসায়ী তার গুদামে নিয়ে যাওয়ার পথে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চোরাই চিনি সরকারি নিলাম ডাকে কেনার আক্রোশে চোরাকারবারিদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে বিয়ানীবাজার পৌর ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মী এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

গত শনিবার (৮ জুন) দুপুরে সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের চারখাই পুলিশ ক্যাম্পের কাছে এ ঘটনা ঘটে।

তবে চিনির মালিক বিষয়টি গোপন রেখে ব্যক্তিগতভাবে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল রবিবার বিয়ানীবাজার থানা-পুলিশকে জানান।

খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে জানিয়ে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবদুলাল ধর আজকের বসুন্ধরাকে বলেন, ‘চিনির মালিকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গাড়ির চালককে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছি। আশা করি চিনি উদ্ধার হবে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা যাবে।’

ছিনিয়ে নেওয়া চিনির মালিক ব্যবসায়ী বদরুল ইসলাম। তিনি সরকারি নিলাম ডাক থেকে চিনি কিনেছিলেন।

বদরুল জানান, চারখাই বাজারে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।গত কয়েক দিন ধরে তিনি সরকারের বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে এক হাজার ৪৭৭ বস্তা চিনি নিলামের মাধ্যমে কেনেন। ওই চিনি থেকে ৪০০ বস্তা চিনি তিনি শাহগলী বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। শনিবার দুপুরে একটি ট্রাকে করে বিক্রীত চিনি নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি ঘটে।

ব্যবসায়ী বদরুলের অভিযোগ, ১৫-১৬ জনের মতো তরুণ একটি প্রাইভেটকার, চারটি মোটরসাইকেল এবং একটি পিকআপ নিয়ে চিনিবোঝাই ট্রাকের গতিরোধ করে। এ সময় তারা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ট্রাকচালককে জিম্মি করে। ট্রাকের চিনি তাদের পিকআপ ভ্যানে তুলে বিয়ানীবাজার পৌর শহরে নিয়ে গিয়ে দুটি গ্রামে ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে বলে ব্যবসায়ী বদরুল জানতে পেরেছেন। ছিনিয়ে নেওয়া চিনির বাজারমূল্য প্রায় ২৪ লাখ টাকা।

ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শফিউল্লাহ সাগর ও নাঈম আহমদ তাফাদারের নেতৃত্বে চিনি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি সাদা রঙের। তবে নম্বরবিহীন। প্রাইভেট এই কারটি বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ব্যবহার করে।

রবিবার (৯ জুন) বিকেলে যোগাযোগ করলে চিনির মালিক বদরুল ইসলাম আজকের বসুন্ধরাকে বলেন, ‘স্থানীয় ছাত্রলীগের পাতি নেতারা এই ছিনতাই করেছে। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত এসব বিষয় নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত। তাই পুলিশ একটু ধীরগতিতে চলছে। তারা উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে, কিন্তু সঠিক জায়গায় যায়নি। তাই চিনি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে ছিনতাইকারীরা চিহ্নিত হয়ে গেছে। আশা করি আমার চিনি উদ্ধার হবে। চিনি উদ্ধার হলে জড়িতের বিরুদ্ধে মামলা করব।’

ঘটনাস্থল ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি অনেকটা আক্রোশমূলক। পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন সময় চোরাই চিনি জব্দ করার পর এগুলো বিক্রির জন্য সরকারিভাবে নিলাম ডাক আহ্বান করা হয়। এই নিলাম ডাকে অংশ নিয়ে চিনিগুলো কেনায় ব্যবসায়ীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল চোরাই চিনি চক্র। এ ক্ষোভ থেকে উপজেলা ও বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের একটি অংশকে ব্যবহার করে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। ছিনিয়ে নেওয়া চিনি দুটো গ্রামে নিয়ে রাখা হয়। এ সময় কিছু বস্তা ছিঁড়ে ফেলার পর স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে চিনি বিলি করে খেদোক্তি প্রকাশ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

জড়িত ছাত্রলীগের দুই নেতার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। এ জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ঘটনাটি উপজেলা ছাত্রলীগের নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ বলে মনে করছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম।

রবিবার বিকেলে তিনি আজকের বসুন্ধরাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে ঘটনাটি ব্যক্তি বিশেষের। ছাত্রলীগ বা আমরা চোরাই চিনির বিরুদ্ধে। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমরা চাই, অবৈধ কারবার পুরোপুরি বন্ধ হোক। জড়িতরা আইনের আওতায় আসুক।’

সিলেটে এর আগে গত বৃহস্পতিবার ১৪টি ট্রাক দিয়ে চোরাই চিনি পাচারকালে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) অভিযান চালিয়ে ১৪টি চোরাই চিনিভর্তি ট্রাক জব্দ করে। একই দিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ থানা-পুলিশের হাতে ধরা পড়ে চোরাই চিনিভর্তি পাঁচটি ট্রাক। গত শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী দুটি ট্রাক ছিনতাই করে চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দুই দিনে প্রায় তিন কোটি টাকার চোরাই চিনির চোরাচালান ঠেকিয়েছে পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, চোরাই চিনির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলায় চোরাচালান চক্র নানা ফন্দি এঁটে তৎপরতা চালাচ্ছে আইনের উর্ধ্বে কেউ নয় অচিরেই এরা ধরা খাবে আইনের কাছে।