[gtranslate]

স্বপ্ন ছুঁয়ে বিশ্বমঞ্চে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়ালেন মুহাম্মদ


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ৩:৪৬ অপরাহ্ন / ৭২
স্বপ্ন ছুঁয়ে বিশ্বমঞ্চে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়ালেন মুহাম্মদ

স্পোর্টস ডেস্ক

ইসরায়েলের দমন-পীড়ন, অনুশীলনের অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা এবং সীমাহীন কষ্ট—সবকিছুকেই জয় করে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ফিলিস্তিনের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দৌড়ালেন মুহাম্মদ দোয়েদার। পশ্চিম তীরের জেরিকো শহরের সাধারণ রাস্তায় অনুশীলন করে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছানোর এই পথটি সহজ ছিল না তার জন্য। তবুও দেশের পতাকা হাতে গর্বের সঙ্গে দৌড় শেষ করেছেন তিনি।

জাপানের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৮০০ মিটার হিটে ১ মিনিট ৫৩.৬৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেন দোয়েদার। যদিও তালিকার একেবারে শেষের দিকে ছিলেন তিনি, তবুও নিজের পারফরম্যান্সে লড়াই চালিয়ে গেছেন গর্বের সঙ্গে। দৌড় শেষে হাঁপাতে হাঁপাতে তিনি বলেন,
“ফিলিস্তিনের মানুষদের আমি দুঃখিত বলছি। আমি জানি আমি আরও ভালো করতে পারি। মাত্র দুই ল্যাপ—আমি জানি পারব।”

ফিলিস্তিনি অ্যাথলেটদের জন্য এটি এক বিশেষ মুহূর্ত। কারণ ইসরায়েলি দমন-পীড়নে এ পর্যন্ত ৮০০’র বেশি ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট প্রাণ হারিয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে দোয়েদারের গলা কেঁপে উঠল,
“ফিলিস্তিনের শিশুরাও স্বপ্ন দেখে। আমাদের চোখ আছে, হাত আছে, পেশি আছে। আমাদেরও অধিকার আছে।”

দুই মাস আগে জার্মানিতে প্রথমবার কৃত্রিম ট্র্যাকে অনুশীলন করার সুযোগ পান দোয়েদার। তিনি বিশ্বাস করেন, তার শরীর ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের মধ্যে এই দৌড় শেষ করতে সক্ষম। এখন লক্ষ্য আরও উন্নতি করে ফিলিস্তিনের জন্য আন্তর্জাতিক পদক জয়।
“আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে, ফিলিস্তিনের জন্য একটি পদক আনতে হবে। এটা খুব কঠিন, তবে আমার হাতে এখনও দুই-তিন বছর আছে,” দৃঢ় কণ্ঠে বললেন তিনি।

আগামী নভেম্বর ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে দোয়েদারের। এর আগে কিছুদিন পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন জেরিকোতে, পরে আবার প্রশিক্ষণের জন্য জার্মানিতে ফিরে যাবেন। তবুও নিজের দেশকেই জীবনের শেষ গন্তব্য হিসেবে দেখতে চান তিনি।
“আমি কয়েক বছরের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে পারি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনেই ফিরব। এটাই আমার দেশ, আমার শহর।”

মাত্র ১০ বছর বয়সে দৌড় শুরু করেছিলেন দোয়েদার। অনুপ্রেরণা ছিলেন তার বড় বোন। শারীরিক শিক্ষায় ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন আল-কুদস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। প্রয়াত বাবার স্বপ্নই তাকে এগিয়ে যেতে শক্তি জুগিয়েছে।
“আমার প্রয়াত বাবা আমার সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল আমি চ্যাম্পিয়ন হব। ভালোবাসি বাবা, ভালোবাসি মা,” বললেন দোয়েদার হাসিমুখে।

দৌড়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই জাতিসংঘ গাজায় গণহত্যার ঘোষণা দেয়। সেখানেই সাংবাদিকদের সামনে আবেগতাড়িত দোয়েদার বললেন,
“গণহত্যা বন্ধ করুন, দয়া করে থামান। আমি কাঁদতে চাই কিন্তু পারছি না। আর টিভি বা ফোনে এসব দেখতে চাই না।”

জাতীয় রেকর্ড ভাঙা, ব্যক্তিগত সেরা সময়ের নিচে নামা এবং ফিলিস্তিনের জন্য পদক জেতার স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলছেন মুহাম্মদ দোয়েদার। তার কথায় ফুটে উঠল এক অদম্য প্রতিজ্ঞা—
“আমি যতটুকু পারি ফিলিস্তিনকে দিতে চাই। এটিই আমার স্বপ্ন, এটিই আমার জীবন।”  R