হার না মানা জয়ীতা, অদম্য মেধাবী পক্ষাঘাতগ্রস্ত জ্যোতি এবার এইস এস সিতে বসছে


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৩১, ২০২২, ৯:১৩ অপরাহ্ন / ৬২২
হার না মানা জয়ীতা, অদম্য মেধাবী পক্ষাঘাতগ্রস্ত জ্যোতি এবার এইস এস সিতে বসছে

 

শাহাবুদ্দিন মোড়ল ঝিকরগাছা যশোর :

যশোরের ঝিকরগাছা শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজের অদম্য মেধাবী, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, শারীরিক ভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী জ্যোতি হোসেন আগামী ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এইস এস সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে। তার হাত পা সহ পুরো শরীর অবশ। শুধু মুখ দিয়ে কথা বলতে পারে। শ্রুতি লেখক হিসেবে তার ছোট বোন জেবা সেই কথাগুলো খাতায় লিখে দেয়। আর এভাবেই প্রাথমিক সমাপনী, জে এস সি এবং এস এস সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে প্রতিবারই জি পি এ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এবারের পরীক্ষায়ও সে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে আশাবাদী। ঝিকরগাছা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের আব্দুল খালেক এবং রেক্সোনা হোসেন দম্পতির বড় মেয়ে এই জ্যোতি। জন্ম ২০০২ সালে। আর দশটা শিশুর মতই স্বাভাবিক ছিলো তার জীবন। ২০০৭ সালে একটি দূর্ঘটনা তার সমস্ত পৃথিবীকে ওলট-পালট করে দিলো। নানাবাড়ি থেকে ফেরার পথে ভ্যানের চাকার সাথে ওড়না জড়িয়ে গলায় ফাঁস লেগে তার পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়। শত চেষ্টার পরেও ডাক্তাররা তাকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে নি। জ্যোতির পিতা সাবেক ব্যাংকার আব্দুল কাদের বলেন, সে অসুস্থ হওয়ার পর আমি তাকে নিয়ে ঢাকা, কলিকাতা, মাদ্রাজ, ভেলোর সব জায়গায় নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু ডাক্তাররা কোনো আশা দিতে পারেনি। জ্যোতির মা রেক্সোনা হোসেন বলেন, আমার মেয়ে ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী। অসুস্থ হওয়ার পরও সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছে। পারবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে প্রাথমিক সমাপনী পাশ করে। এরপর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির সময় কয়েকটি স্কুল তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য ভর্তি নিতে চায়নি। অবশেষে বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিমি দুরে অবস্হিত ঝিকরগাছা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। প্রতিদিন হুইলচেয়ার ঠেলে তাকে আমি স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করতাম। এভাবেই ঐ স্কুল থেকে ২০২০ সালের এস এস সি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজে এইস এস সি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। আগামী ৬ তারিখ তার পরীক্ষা শুরু হবে। তিনি সকলের কাছে মেয়ের জন্য দোয়া চান। জ্যোতি জানান, আমি পড়াশোনা করে আবহাওয়াবিদ হতে চায়। এইস এস সি পাশ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আশা আছে। সে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।