বিশেষ প্রতিনিধি ঃ
গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূরের সভাপতিত্বে এবং নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ারের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-র কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ নুর হোসেনের রক্তের সাথে বেঈমানি করেছে। এই আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করে গণতন্ত্রের জন্য জীবন দেয়া নূর হোসেনের বেদিতে ফুল দিয়ে তামাশা করে। ভোট ডাকাত সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন কায়েম করে লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। বিরোধী দলের উপর হামলা, মামলা, আটকের প্রতিবাদ করে নূর বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বলি, এখনো সময় আছে, হাওয়া বোঝার চেষ্টা করেন। নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন। এই সরকারের দিন শেষ।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গত রাতে নাগরিক ঐক্যের দুইজন সংগঠক কিরণ এবং রনিকে বিনা কারণে আটক করে সারারাত থানায় আটকে রেখেছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ বাহিনী। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা, মামলা, আটকের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে কোন লাভ হবে না। যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে তা ঠেকানো যাবে না। সরকারের উদ্দেশ্যে মান্না বলেন, আপনারা বলছেন – খেলা হবে। যদি রাজনীতির খেলায় আসেন, তাহলে জনগনের প্রতিরোধের সামনে টিকতে পারবেন না। যতই ধর্মঘট আর অবরোধ দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করেন, ডিসেম্বরে কোনকিছুই টিকবে না। এবারের খেলায় জনগণ জিতবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, নুর হোসেন জীবন দিয়েছিলেন গণতন্ত্রের জন্য। কোন দলকে ক্ষমতায় এনে স্বৈরাচার বানানোর জন্য নয়। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা প্রাতিষ্ঠানিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। যখন যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, তারা যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকার পথ তৈরি করার চেষ্টা করেছে। এজন্য সরকার পতনের সাথে সাথে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। সেটা না করা গেলে, সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বিবৃতিতে দেখলাম, নুর হোসেন নাকি সেদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির সাথে সাথে যাচ্ছিল। কিন্তু দূর্ভাগ্য, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নুর হোসেনের পথে হাঁটতে পারেননি। তিনি উল্টো হেঁটে গণতন্ত্র ধ্বংস করে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছেন। এই সরকারের মদদপুষ্ট গোষ্ঠী লুটপাট, দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে দূর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাদের উন্নয়নের বয়ান এখন আর মানুষ বিশ্বাস করে না। দেশের জনগণকে আর বেঁধে রাখা যাবে না। এবার তারা স্বৈরাচারকে বিদায় করে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে। আর সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, নূর হোসেনকে সত্যিকার সম্মান দেখাতে হলে, দেশকে বাঁচাতে হলে, বর্তমান স্বৈরাচার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। তারপর শাসন ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে, সংবিধান সংস্কার করতে হবে। বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় বার বার স্বৈরাচারের জন্ম হবে। আমরা চাই রাষ্ট্রের সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রূপান্তর।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম তার বক্তব্যে বলেন, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এই সরকারকে বিদায় করতে হবে, সাথে সাথে সংবিধান এবং শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় আবারও স্বৈরাচারের জন্ম হবে। সংবিধানের সংস্কার ছাড়া এই রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন সম্ভব না। কিন্তু এই সবকিছুর জন্য বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারকে হঠাতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-র কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের প্রতীক নুর হোসেনকে নিজেদের দলের কর্মী দাবি করে, অথচ নিজেরা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। পূর্বের সব স্বৈরাচারের মত এই সরকারকেও বিদায় নিতে হবে। সেই সময় ঘনিয়ে এসেছে। বর্তমান স্বৈরাচারের পতনের সাথে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)র সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মুহম্মদ রাশেদ খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, ভাষানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মহিবুল্লাহ বাহার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরের সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক।
আপনার মতামত লিখুন :