শিব্বির দেওয়ান-
একটি স্বপ্ন একটি পতাকা একটি দেশ। সে দেশের স্বপ্ন দেখে ছিলেন ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব। একটি পতাকা একটি দেশের জন্ম দিলো। সে দেশের নাম স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। ২রা মার্চ ১৯৭১ সালে ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় কলা ভবনের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করলেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষহীন-সংগ্রামে বলিয়ান। স্বাধীনতার প্রত্যাশায় পূর্ব বাংলার পরাধীন আকাশে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে দিলেন। সেই লাল সবুজ পতাকা বাংলাদেশের অস্তিত্ব বহন করে একটি স্বাধীন দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। সেই দেশের নাম স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। সে দেশের জন্ম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম লাশের মিছিল রক্তনদী পেরিয়ে কাঙ্খিত স্বাধীনতা। আর সেই স্বাধীন দেশের স্বপ্ন হৃদয়ে লালন করে মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে ২রা মার্চ ১৯৭১ সালে পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীনতার শুভ সূচনা করে স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেন আ স ম আবদুর রব ফলে হয়ে উঠেন স্বাধীনতার স্পর্শমনি।
সাহসের প্রতিচ্ছবি আ স ম আবদুর রব। চেতনায় উদ্ভাসিত একটি স্বপ্ন একটি পতাকা একটি দেশ। পতাকা উত্তোলনের মহাকারিগর। দিকনির্দেশনায় বাবরি চুলের অধিকারী। ঘুমহীন জাগরুক। স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা রুপকার ত্যাগী জাতি দেশময় স্বদেশ প্রেমের নিদর্শন রহস্য পুরুষ খ্যাত দাদা সিরাজুল আলম খান।
স্বাধীনতার প্রশ্নে ২রা মার্চ স্বাধীনতার শুভ সূচনা স্পর্শ মনি আ স স আবদুর রব মনোভাবে রাজপথে দূর্বার ছাত্রসমাজ। সে লক্ষ্যেই দাদা সিরাজুল আলমের দিকনির্দেশনায় তৎকালীন ছাত্রনেতা ভিপি আ স ম আবদুর রব স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন করে জাগ্রত করেন ছাত্রসমাজকে। পতাকা উত্তোলিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়। চেতনায় আদর্শে উজ্জীবিত ছাত্রসমাজ। নেতৃত্বে সময়ের সাহসী সন্তান ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব। জনতার মহাবিস্ফোরণে আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয় তুমি কে আমি কে বাঙালি-বাঙালি। তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা-পিন্ডি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত রব রব আওয়াজ। স্বাধীনতা ছোঁয়ার অধির অপেক্ষা। অগ্নিঝরা মার্চে চেতনায় আদর্শে উত্তাল সারা দেশ। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলিত হয়।
১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ হয়। পাঠ করেন ছাত্রনেতা শাহাজান সিরাজ দাদা সিরাজুল আলম খানের নির্দেশনায়। পরাধীন থেকে মুক্তি পেতে স্বাধীনতাকে এগিয়ে দিলেন দাদা সিরাজুল আলম খান। এগিয়ে নিলেন দুই ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব ও শাহাজান সিরাজ।
অগ্নিঝরা মার্চে জাতির প্রত্যাশা পূরণে ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে মঞ্চে আসলেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান নেতা বক্তৃতা করলেন। শোষন নির্যাতনের কথা বললেন-অধিকারের কথা বললেন-স্বাধীনতার কথা বললেন-ত্যাগের কথা বললেন। হুঁসিয়ারী প্রদান করলেন-যদি আর একটা গুলি চলে-যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়-ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলো। শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। দীর্ঘ এই বক্তৃতায়-দেশ জাতির কথা বলেছেন। ৭ মার্চের ভাষন ইতিহাসের মহাকাব্য। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার মোহনবাঁশি বাঁজিয়ে গর্জে উঠলেন আরেক প্রাণ পুরুষ ২ নাম্বার সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান। আমি মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। দেশপ্রেমের সাহসী পদক্ষেপ। দেশ প্রেমের নিদর্শন। দেশ জাতিকে উজ্জীবিত করার প্রেরণা।
৯ মাসের সংগ্রাম-রক্তনদী-মৃত্যুর মিছিল লাশের মেলা। ধ্বংস্তুপ স্বদেশ। অত:পর ত্রিশ লাখ শহীদের বিনিময়ে দুই লাখ মা বোনের ইজ্জতহানির প্রতিদানে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর রক্তনদী পেরিয়ে কাঙ্খিত স্বাধীনতা। স্বাদের স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। সদ্য স্বাধীন দেশে সিরাজুল আলম খান বিপ্লবী জাতীয় সরকার কিংবা জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। মত ভিন্নতায় সিরাজুল আলম খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দ্বিমত দেখা দেয়। ফলে গুরু শীর্ষের রাজনীতির ছন্দ পতন ঘটে। দুই জন দু’ধারায় বিভক্ত। সৃষ্টি হয় জাসদ/জেএসডি। ফলে সমাজতন্ত্র স্লোগান তুলে জাসদ/জেএসডি আত্মপ্রকাশ করে। জাসদ/জেএসডি আত্মপ্রকাশ করে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর। ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে জাসদ/জেএসডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১৯৭৩ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রদান প্রতিপক্ষ জাসদ/জেএসডি। সেই নির্বাচনে দমন-পীড়ন। ভোটের বাক্স ছিনতাই। প্রার্থী হাইজ্যাক। কত কি? যা ইতিহাসে প্রতীয়মান। জেএসডির আছে পতাকা উত্তোলনের ইতিহাস। জেএসডির আছে ইশতেহার পাঠের ইতিহাস। জেএসডির আছে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার ইতিহাস। জয় বাংলা বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছে আ স ম রব। জেএসডি ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে পতাকা পতপত করে-তা উড়িবে উদিত হবে চিরকাল মহাকাল। লাল সবুজের পতাকায় রব তোমায় দেখা যায়। স্বাধীনতার স্পর্শমনি আ স ম আবদু রব। ইতিহাস স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত। ইতিহাস সৃষ্টি করা কঠিন-বিকৃতি করা সহজ। ঐতিহাসিক ২রা মার্চকে পতাকা উত্তোলন দিবস পালন করে ইতিহাসের গতিধারা ঠিক রাখা নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। ইতিহাস কাটাছেঁড়া করলে ইতিহাস ব্যাথাঘাত হয়ে ফিরে আসে। এটা ইতিহাসের শিক্ষা। আসুন শিক্ষা গ্রহণ করি। ন্যায্যতার প্রশ্নে সত্যকে ধারন করি। ২রা মার্চ স্বাধীনতার শুভ সূচনা এটাই মহাসত্য।
আসুন সত্যকে ধারণ করি-সঠিক ইতিহাস লালন করি।
ইহা ই দেশ প্রেম। যার যা অবদান তার তা প্রাপ্যতা দিয়ে ইতিহাসকে করি উজ্জল। আ স ম রব ইতিহাসের জীবন কিংবদন্তি। রব ভাই-লাল সালাম। দীর্ঘায়ু আর শুভ কামনা।
আপোষহীন সংগ্রাম। দেশ জাতিময় ভালোবাসায় আলোকিত হোক স্বদেশ মানুষ মানবতা। কৃর্তিকে চির জাগরুক থাকুন কালের প্রবাহে। আ স ম আবদুর রবের জীবন মানে ই রাজনীতি। রাজনীতির ধারক বাহক হয়ে রাজনীতির অংশ বিশেষ হয়েছে আছেন ইতিহাসের পাতায় পাতায়। আজ জীবনের পড়ন্ত বেলায় অবতীর্ণ। তবু ও দেশ জাতি রাজনীতি নিয়ে এখনো ভাবেন। ছাত্র থেকে রাজনীতি শুরু করেন। ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় নেতা। জাতির প্রতিনিধিত্ব করেছেন জন ভোটে নির্বাচিত হয়ে। রাজনীতির মাঠে সংগ্রাম করেছেন অধিকার আদায়ে শোষনমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার জন্য। স্লোগান তুলে ছিলেন মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। শ্রমজীবি, কর্মজীবি, পেশাজীবি জনগণ এক হও। অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ই লক্ষ্য। রাজনীতির দীর্ঘ পরিক্রমায় দেশ জাতি প্রেমে অবদান অনেক। স্বাধীনতার স্বপ্ন স্বাদ যখন বিপন্ন তখন স্বাধীনতার স্বপবন স্বাদ বিপন্ন মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে দল গঠন করেছেন-আওয়ামী লীগকে চ্যালেন্স করেছেন। পেরেছেন কি পারেন নি তা ইতিহাস বিচার করবে। জেল খেটেছেন। রক্ষীবাহিনী মোকাবেলা করেছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। সব কিছু মোকাবেলা করে ই ইতিহাসের কিংবদন্তি আ স ম আবদুর রব হিসেবে পরিচিত। যে পতাকা পতপত করে উড়ে বাংলার আকাশে। যে পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে আমরা শ্রদ্ধা অবনত চিত্তে বলি-
আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি।
সে লাল সবুজ পতাকার সংস্পর্শে আ স ম আবদুর রব স্মরনীয় হয়ে আছেন থাকবেন চিরকাল মহাকাল। কালের প্রবাহে ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ নন্দিত মহানায়ক তৎকালীন ডাকসুর ভিপি ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব।
আপনার মতামত লিখুন :