মানবিক সহায়তায় গংগাচড়ার ইউএনও


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৩০, ২০২২, ১০:৪৯ অপরাহ্ন / ৩৮১
মানবিক সহায়তায় গংগাচড়ার ইউএনও

রিয়াজুল হক সাগর রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

উপজেলা প্রতিনিধি: গংগাচড়া ইউএনও অফিসে ঢুকলেই চোখে পড়বে একটি মানবিক সহায়তার বক্স। উপজেলা প্রশাসন গংগাচড়ার সৌজন্যে তৈরি এটি করা হয়েছে। গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগদান করেই নিজ কার্যালয়ে মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপন করেন এরশাদ উদ্দিন। তিস্তা নদী বেষ্টিত উপজেলা রংপুরের গঙ্গাচড়া। প্রতি বছর বন্যা আর নদীভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে চরাঞ্চলে বসতভিটা আর ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বারবার হিমশিম খেতে হয় হতদরিদ্র কৃষকদের। জীবনমানের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে অর্থাভাবে থমকে যাচ্ছে কারো কারো স্বপ্ন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে পারছিলেন না গঙ্গাচড়া বেতগাড়ী ইউনিয়নের শামিম ইসলাম। মানবিক সহায়তা বক্সের প্রাপ্ত অর্থ থেকে তাকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৫ জন গরীব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিশেষ করে বই, খাতা-কলম, ইউনিফর্ম, জুতা, স্যান্ডেল, ছাতা, ব্যাগ, খাদ্যসামগ্রী ও ঔষধ বিতরণ করা হয়। তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গরীব ও অসহায় মানুষকে দেওয়া হচ্ছে মানবিক সহায়তা। মানবিক সহায়তা বক্র থেকে প্রতিদিন এ কেউ না কেউ সাহায্য পেয়ে চলছে। এক সময়ে দেশের মধ্যে আলোচিত উপজেলা মঙ্গাপীড়িত গংগাচড়া। বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও এখনো কমেনি হতদরিদ্র ও অভাবী মানুষের সংখ্যা। এ কারণে অসহায়, দুস্থ, হতদরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলার এই ইউএনও। ইউএনওর মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সচেতন মহল। এই মানবিক সহায়তা বক্সে সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সমাজের অনেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন তারা। ইউএনও সমাজের বিত্তবানসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা বক্সে টাকা ফেলতে উৎসাহিত করছেন। সহায়তার ক্ষেত্রে টাকার কোন অংক নেই। মানবিক সহায়তার জন্য ২ টাকা করে চেয়েও নিচ্ছেন তিনি। সবাই খুশি হয়েই নির্ধারিত বক্সে টাকা দিচ্ছেন। সেবা প্রত্যাশী কিংবা যে কোন প্রয়োজনে ইউএনওর কার্যালয়ে যারাই আসছেন, তাদের চোখে পড়ছে এই মানবিক সহায়তার বক্সটি। নিজে থেকেই বক্সে সহায়তার অর্থ দিয়ে শান্তি অনুভব করছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রিয়াদ বলেন, সরকারিভাবে হতদরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে তারপরও কিছু মানুষ এই সুবিধার বাইরে থাকে। তাছাড়া সময় মতো এই সুবিধা মেলে না। সময়মতো তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ইউএনওর এই মানবিক সহায়তা বক্স নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। গঙ্গাচড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম বলেন, ইউএনও যোগদান করে প্রথমেই তার কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত চেয়ারের ব্যবস্থা করে আমাদের সম্মানিত করেছেন। সঙ্গে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র, অসহায়, দুস্থ মানুষদের জন্য তার মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপনের বিষয়টি ব্যতিক্রম এবং প্রশংসনীয়। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মী, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সুশীল সমাজের যারাই বিভিন্ন প্রয়োজনে ইউএনওর কার্যালয়ে আসছেন, তাদের নজর কাড়ছে মানবিক সহায়তার জন্য বক্সটি। অনেকেই বক্সে সহায়তার অর্থ দিয়ে প্রশান্তির হাসি নিয়ে ফিরছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বলেন, ইউএনও মহোদয় যোগদানের পরেই আমাদের এই মানবিক সহায়তা বক্সের কথা বলেন, আমরা সবাই করার ব্যাপারে মতামত দেই। এখনও বক্সটি খোলা হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে খুললে যা সহায়তা পাওয়া যাবে তা একটি দরিদ্র তহবিল হিসেবে রাখা হবে। সেখান থেকে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র, অসহায়, দুস্থ মানুষদের সহায়তা করা হবে। অবশ্যই মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপনের বিষয়টি ব্যতিক্রম এবং প্রশংসনীয়। আমার এখানে দরিদ্র পরিবার এবং মেধাবী শিক্ষার্থী লেখাপড়ার জন্য সহায়তা চাইতে আসে। আমি চেষ্টা করি ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করতে। তবে মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপনের মাধ্যমে সবার সহযোগিতায় আরও বেশি মানুষকে সহযোগিতা করা যাবে। সেই উদ্দেশ্যে এই মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, আমার এখানে যারা আসেন আমি তাদের বলি, আপনারা বাহিরে অনেক স্থানে ভিক্ষা দেন, এখানে একটি মানবিক সহায়তা বক্স আছে, যা পারেন দিয়ে যাবেন। সবাই স্বতস্ফুতভাবে সাড়া দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই মানবিক সহায়তা বক্সে প্রাপ্ত অর্থ থেকে উপজেলার অসহায়, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হবে। সবাই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে থাকলে অসহায়, দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষদের মধ্যে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচার আশায়।