আট জেলায় শিক্ষা কর্মকর্তার পদ খালি, জোড়াতালি দিয়ে চলছে মাধ্যমিক শিক্ষা


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫, ৮:৩৫ অপরাহ্ন / ৭২
আট জেলায় শিক্ষা কর্মকর্তার পদ খালি, জোড়াতালি দিয়ে চলছে মাধ্যমিক শিক্ষা

 

সিরাজুল ইসলাম (রনি) রাজশাহী প্রতিনিধি :

রাজশাহী বিভাগে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষায় নেমে এসেছে ভয়াবহ সংকট। আট জেলার শিক্ষা দপ্তর এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর ধরে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য পড়ে থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। কোথাও প্রধান শিক্ষক নেই, কোথাও আবার উপজেলা বা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদ ফাঁকা। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুষ্ঠু তদারকি ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিভাগের আট জেলায় জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আটটি পদের মধ্যে চারটি শূন্য। বিদ্যালয় পরিদর্শকের চারটি পদের একটিতেও কর্মকর্তা নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ৬৭ পদের মধ্যে ৩০টি ফাঁকা এবং বাকি ৩৭টিতেই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে কাজ চালানো হচ্ছে। সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ৬৭ পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র আটজন, বাকি ৫৯টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। জেলা-উপজেলা শিক্ষা অফিসের মোট ১৫৮ কর্মকর্তার পদের মধ্যে ১০০টির বেশি শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মিলে ২৪০টি পদের মধ্যে ১৫৮টিই ফাঁকা।

রাজশাহী অঞ্চলের পুরাতন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৮টির ৩৮টিতেই দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। এর মধ্যে মাত্র নয়টি স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন, আর বাকি স্কুলগুলোতে সহকারী শিক্ষক দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাজ চালানো হচ্ছে। গত সরকারের সময়ে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছিল। তিন দফায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় শতাধিক স্কুলকে সরকারি করা হলেও এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশেই প্রধান শিক্ষক ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। ফলে স্কুলগুলো চলছে জোড়াতালি দিয়ে।

রাজশাহীর মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার এই বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ থাকা। সর্বশেষ ২০০৫ সালে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে সহকারী জেলা মাধ্যমিক অফিসার ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৮৬ জন নিয়োগ পান। তারও আগে ১৯৯৮ সালে ৫২ জনকে সরাসরি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে কোনো পদে সরাসরি নিয়োগ হয়নি। ফলে আগে যারা নিয়োগ পেয়েছিলেন তাদের অধিকাংশই অবসরে গেছেন, আর যারা আছেন তারাও অবসরের পথে।

বিধি অনুযায়ী সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও বিদ্যালয়ের পদগুলোতে ২০ শতাংশ সরাসরি এবং ৮০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হওয়ার কথা থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নিয়মিত পদোন্নতিও হচ্ছে না। ফলে শূন্যপদ বেড়েই চলছে। অফিস ও বিদ্যালয়গুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমে সুষ্ঠু তদারকি ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কার্যক্রম ভেঙে গিয়ে বর্তমানে শিক্ষা অনেকাংশেই কোচিং সেন্টারনির্ভর হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে এ বিষয়ে মাউশির আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, বহু বছর ধরে সরাসরি কর্মকর্তা ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে কোনো নিয়োগ হয়নি। আবার পদোন্নতির মাধ্যমেও শূন্য পদ পূরণ করা হয়নি। বিভাগের অনেক জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে কর্মকর্তা নেই, অনেক নামকরা স্কুলেও প্রধান শিক্ষক নেই। মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগকে আলাদা করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর করা হলে এই সংকট নিরসন সম্ভব।


There is no ads to display, Please add some