উপস্থাপনায় সেরা হওয়ার লড়াইয়ে বগুড়ার তামান্না খন্দকার


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৪, ২০২৪, ৯:৫০ অপরাহ্ন / ১৩০
উপস্থাপনায় সেরা হওয়ার লড়াইয়ে বগুড়ার তামান্না খন্দকার

এনামুল হক,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
উত্তরবঙ্গের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স এর শিক্ষার্থী তামান্না খন্দকার। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার চার্জহ্যান্ড সাঈদুর রহমান ও শারমীন রহমান দম্পতির ৩ মেয়ের মধ্যে তামান্না বড়। ছোটবেলায় বিটিভির সংবাদ উপস্থাপক প্রয়াত শাজাহান খন্দকারের উপস্থাপনা দেখে উপস্থাপনার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে তামান্না।

তামান্না যখন বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী, সেই সময় থেকেই মঞ্চের সাথে সম্পর্ক তার। এরপর থেকেই আবৃত্তি, বিতর্ক, উপস্থাপনা এবং উপস্থিত বক্তৃতার মধ্য দিয়ে নিজেকে করেছে সমৃদ্ধ।

এবার উপস্থাপনায় নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে অংশ নিয়েছেন মমতাজ হারবাল প্রোডাক্টস নিবেদিত ‘আলো ছড়াবে উপস্থাপনায়’ শিরোনামের ব্যতিক্রমী এক আয়োজনে। যার স্টুডিও রাউন্ড শুরু হয়েছে গোটা দেশ থেকে তুলে আনা ৭৫ জন প্রতিযোগীর মাধ্যমে। ১২টি পর্বের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধারার উপস্থাপনা করতে হয়েছে মূল প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত সবাইকে। সেখান থেকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য উঠে এসেছেন ৬ জন প্রতিযোগী। ৬জন প্রতিযোগীর একজন বগুড়ার তামান্না খন্দকার। এই প্রতিযোগীদের থেকে নির্বাচন করা হবে সেরাদের সেরা উপস্থাপককে।

আমরা রিয়েলটি শো মানে মনে করতাম নাচ, গান কিংবা অভিনয়ের প্রতিযোগিতা। তবে এনটিভি আমাদের এই ধারণার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এবারই প্রথম দেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপস্থাপক খোঁজার আয়োজন। ১২টি পর্বে সাজানো এই ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব হতে যাচ্ছে ৫ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে এনটিভির পর্দায়। এদিন চূড়ান্ত বিজয়ীকে নির্বাচন করবেন দেশের স্বনামধন্য দুই উপস্থাপক ফেরদৌস বাপ্পী ও ফারহানা নিশো। যে দু’জনই উপস্থাপনা অঙ্গনে তিন দশক ধরে কাজ করে আসছেন সাফল্যের সঙ্গে।

বাপ্পী-নিশো ছাড়াও প্রতি পর্বে অতিথি বিচারকের আসনেও দেখা গেছে বিভিন্ন অঙ্গনের জনপ্রিয় সব ব্যক্তিত্বদের। এ তালিকায় রয়েছেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আবিদা সুলতানা, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, সাইমন ও ইমন, দেশসেরা কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ, জনপ্রিয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব শামীম আশরাফ চৌধুরী, উপস্থাপক অনজাম মাসুদ, টকশো উপস্থাপক শবনম আজিম, সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন, পরিচালক তানভীর আহমেদ খান, দেবাশীষ বিশ্বাসসহ অনেকে। অনুষ্ঠানটির অডিশন রাউন্ড এর উপস্থাপনা করেছেন তাবাসসুম প্রিয়াংকা এবং মূল পর্বের উপস্থাপনা করছেন ফারজানা বীথি।

টপ সিক্সে থাকা বগুড়ার তামান্না খন্দকার বলেন, আমার পরিবার আমাকে সবসময় সাপোর্ট করেছে। তবে, স্কুলজীবন আমাদের সবার কাছেই স্মরণীয়। আমার কাছে স্কুল জীবন নিয়ে কিছু বলা মানেই ছোটাছুটি আর কবিতা অনুশীলনে ব্যস্ত সময় কাটানো। একটা লম্বা সময় অ্যাসেম্বলিতে ৫০০ শিক্ষার্থীদের মাঝে খালি গলায় শপথ বাক্য পাঠ করাতাম। একথার সাথে একটা স্নেহময় মানুষের ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। আমি আমার জীবনের কোনো অবস্থাতেই তাকে ভুলবো না। তিনি আমার অতি শ্রদ্ধেয় ভালোবাসার একজন শিক্ষিকা বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুলের নুরজাহান ম্যাম। আমি বারংবার বলতে পারি, এতো বকা তিনি আর কাউকে দেন নি। আর সেই বকাতেই যে ভালোবাসা ছিল এটুকুু বুঝতাম। আমার শপথ বাক্য পাঠ তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, শেষে বলতেন এই উচ্চারণটা ঠিক হয় নি, আজ শপথ বাক্য পাঠ ভালো হয়েছে।

বদমাশ, দুষ্ট রাণী ছাড়া ডাকতেন না। কানে কি দুল পড়েছি, কিভাবে চুল বেঁধেছি সব খেয়াল করতেন। প্রচুর বই রিডিং পড়িয়েছেন পড়ার মাঝে ভুল উচ্চারণ ধরিয়ে দিতেন। নাকে বাধিয়ে পড়লে ধমক দিয়ে ঠিক করতে বলতেন। আজকের আমি যতটুকু, তা গড়ার কারিগর এই মানুষটা। তাতে কোনো ভুল নেই। স্কুল শেষে একবার দেখা হয়েছিল। আমি জড়িয়ে ধরেছিলাম। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেই ফেলেছিলাম, ‘আর কেউ আপনার মতো করে বকে না। ভুল করলাম না ঠিক করলাম, ধরিয়ে দেয় না।’

তামান্না খন্দকার আরও বলেন, জীবনে বন্ধুবান্ধবদের সংখ্যা কম হলেও স্কুল, কলেজ আর ভার্সিটি জীবনে শিক্ষক শিক্ষিকাদের স্নেহ, ভালোবাসার কমতি হয়নি কখনো। সবাই উৎসাহ দিয়েছেন আমি পারবো। গুরুজনদের ভালোবাসা আর দোয়ায় আজ আমি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত মমতাজ হারবাল প্রোডাক্টস প্রেজেন্টস ‘আলো ছড়াবে উপস্থাপনায়’ গ্রান্ড ফিনালেতে।

তামান্নার বিষয়ে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তামান্না খন্দকার আমার ছাত্রী। তাকে খুব কম সময়ের জন্য ছাত্রী হিসেবে পেলেও স্নেহ-সম্মানের সম্বন্ধটা গভীর। তামান্নাদের ব্যাচ যখন অনার্স ৪র্থ বর্ষে তখন আমার আগমন তাদের কলেজে। তারপর কলেজের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার সুযোগে তার সাথে পরিচয় এবং তাকে ও তার আগের ক্ষেত্র সম্বন্ধে অবগত হওয়া। তামান্না মূলত একজন কথা শিল্পী ও আবৃত্তিকার। বাচনভঙ্গি চমৎকার, কণ্ঠস্বর সুললিত এবং আবেশী। উপস্থাপনার ঢঙ মোহনীয়। সে শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতিও যথেষ্ট সচেতন। নিজের সাংস্কৃতিক সত্ত্বাকে বিকশিত করার ইচ্ছাটাও লক্ষণীয়।

সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, সংস্কৃতি জীবনভর সাধনার বিষয়, যার শেষ বলে কিছু নেই। সেই সাধনায় ডুব দিলে মুক্তা পাওয়া সম্ভব। তামান্নার জন্য দোয়া করি, তার সাংস্কৃতিক পথচলা মসৃণ হোক- হয়ে ওঠো দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন পরিচিত মুখ। তাকে সমর্থন ও সহযোগিতা দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করছি এবং যে সকল প্রতিষ্ঠান নতুন সংস্কৃতি শিল্পীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন তাদের প্রতি জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা।