আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ও কবি-লেখকদের কার্ড প্রসঙ্গে


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৫, ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন / ৮২
আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ও কবি-লেখকদের কার্ড প্রসঙ্গে

নু্র মোহাম্মদ.

দেশ-বিশ্বের বিভিন্ন প্রকার আবিস্কারক বিজ্ঞানী, কবি- সাহিত্যিক, লেখক-সাংবাদিক, বিভিন্ন জাতীয়-আন্তার্জাতিক মিডিয়ার প্রতি সম্মান, অনুরাগ, ভালবাসা, রুচি, উৎসাহ প্রভৃতি কারণে আমার লেখালেখি ও সাংবাদিকতার প্রতি সম্পর্ক ও প্রেম সৃস্টি হয়। তবে কেমন জানি বাল্যকালে গুদাম ঘরের পড়ার টেবিলে বসে পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যায়নকালীন সময়ে খুব সহজাত নিয়মে আমি “বিপিন সবুজ” নামে একটি ছড়া রচনা করি। তখন সম্ভবত ১৯৮৮ সালে হবে। তবে এই রচনা প্রয়োজনে জন্য সংরক্ষণ করা হয়নি।

পরবর্তীতে স্কুল জীবনে সবার কাছে কবি বলে পরিচিতি লাভ করি। স্যার, ম্যাডাম, বন্ধু-বান্ধবী সবাই নানান ক্ষেত্রে, নানান সময়ে কবি বলে উৎসাহ দিত। ১৯৯৫ সালের দিকে কলেজ জীবনে মোটামুটি দেশের প্রথম ও একমাত্র বিজ্ঞান সাপ্তাহিক অহরহতে লেখালেখি ও বিভিন্ন মাসিক পত্রিকায় লেখালেখি করতাম। তার কয়েক বছর পর মাইজভান্ডার দরবার শরীফের গাউছিয়া হক মঞ্জিল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত মাসিক আলোকধারায় নিয়মিত কবিতা ও ফিচার লিখতাম।

২০০০ সাল হতে রেডিক্যাশ ও ২০০৫-২০০৬ সালের দিকে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে দায়িত্ব পালনকালে অফিসের সবাই আমাকে কবি ও সাংবাদিক বলে বেশী বেশী উৎসাহ দিত। রেডিক্যাশের পরিচালক, চট্টগ্রাম-ঢাকা-সিলেট অফিসের কর্মকর্তাসহ সবার উৎসাহ আমার জন্য এক বিরল ঘটনা। পাশাপাশি রেসিডেন্সিয়াল মডেল ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ড. মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের উৎসাহ ও সহযোগিতা আমার লেখালেখি জীবনের অনন্য মাইলফলক।

সে সময় মাসিক চট্টগ্রাম সংবাদ পত্রিকার ফিচার ও সংবাদ বিভাগে স্যার দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেন। অবশ্য সে সময় এবং তার আগে চট্টগ্রামে দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চে বিভিন্ন বিভাগে নিয়মিত লিখতাম। পাশাপাশি ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পোস্টকার্ড পত্রিকায় সংবাদ প্রেরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লিখতাম। পোস্টকার্ড পত্রিকার প্রচার ছিল দেশব্যাপী। এ পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখির ক্ষেত্রে সাংবাদিক আনজুমান আরা শিল্পীর সহযোগিতা স্মরণীয়ন ও বরণীয়।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সে সময়কার চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, সুলেখক প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়ার সার্বিক সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা আমাকে খুবই উৎসাহ যোগায়। তাহার সাথে প্রথমে সুপ্রভাত রাউজানে কাজ করি। এরপর নিজেরাই একটি মাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশনার সাথে যুক্ত হই। প্রকাশনার ক্ষেত্রে রহমানিয়া দরবার শরীফের শাহজাদা আলহাজ্ব এম. আবু বকর ছিদ্দিকীর অবদান ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিভিন্ন সময়ে দৈনিক আজাদীর সহকারী সম্পাদক প্রদীপ দেওয়ানজী, দৈনিক পূর্বকোণের সহকারী সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী বাবু, সহকারী সম্পাদক আবছার মাহফুজ, চট্টগ্রাম বিএড কলেজের অধ্যাপক লেখক শামসুদ্দিন শিশির, সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দিদারুল ইকবাল, সাংবাদিক মাসরুর জুনায়েদ, আনজুমানে জলিলিয়া রহমানিয়ার সভাপতি ও লেখক শাহজাদা মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ সারোয়ার আজম, আহলা দরবার শরীফের নায়েবে সাজ্জাদানশীন শাহজাদা মূফতি সৈয়দ মাঈনুল ইসলাম জুনায়েদ আল মাইজভান্ডারী, দরবারে কামালিয়া শাহজাদা মাওলানা সৈয়দ মাসূম কামাল আল আজহারী, হযরত সৈয়দ চাঁদ শাহ (রহ:) দরবারের শাহজাদা মোহাম্মদ মকসূদুল আলম, রোটারিয়ান ও সমাজসেবক ডা. কামাল হোসেন জুয়েল, অধ্যাপক এরশাদুল মোস্তফা, সাংবাদিক তাজুল ইসলাম রাজু, সাংবাদিক আল সিরাজ ভান্ডারী, সুপ্রভাত রাউজানের সম্পাদক স. ম জিয়াউর রহমান, শিক্ষা অন্বেষা সম্পাদক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন চৌধুরী, লেখক অধ্যক্ষ সোলায়মান কাসেমী, লেখক সৈয়দ নেছার উদ্দিন, সাংবাদিক নয়ন বড়ুয়াসহ অনেকে লেখালেখিতে যথেষ্ট উৎসাহ যুগিয়েছে, নানান ভাবে সহযোগিতা করেছেন।

পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রকাশনা, সংগঠনে যুক্ত হয়ে সৃজনশীল কাজে আরও গভীর ভাবে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি। বার বার আহবানের পরে ও বিদেশে না গিয়ে, বেশী টাকা-পয়সা কামানোর চিন্তা না করে অনেকটা নিভৃতেই প্রকাশনা, লেখালেখি ও ফ্রি-ল্যান্সিং সাংবাদিকতাকে নিজের কাজের অংশ করে নিই। জানি না আমার লেখালেখি ও সাংবাদিকতার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় কারো কোন উপকার করতে পেরেছি কিনা ?

তবে চেষ্টা করি সাধ ও সাধ্যের মধ্য সবার উপকার করার।
তবে একটি বিষয় মাঝে মাঝে মনে মধ্য জাগে বা অনেকে বলে আপনি স্থায়ীভাবে কোন দৈনিক পত্রিকা বা সরকারী- বেসরকারী কোন চাকরী করেন না কেন? তবে আমি মনে করে যে কোন বিষয়ে কাজ করা বা সফল হওয়ার জন্য চাকরীটা আসল নয়। আমি নিজেকে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ লেখক বা সাংবাদিক মনে করি না। তবে চাকরী না করে হাজার হাজার কবি, সাতিত্যিক, লেখক-সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছে। দেখা যাচ্ছে অনেক ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক ও এ সমস্ত কাজে জড়িত আছে।

এখন কথা হল যারা গ্রামে, শহরে সাহিত্যচর্চা করে, লেখালেখি, প্রকাশনা বা সাংবাদিকতা করে তাদেরকে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দৈনিক পত্রিকাগুলো, টিভি চ্যানেলগুলো সহজে মূল্যায়ন করে না। বা সংশ্লিষ্ট কর্তাকর্তারা তাদের অবহেলা করে, নিরুৎসাহিত করে। যার ফলে এ কাজে অনেকেই আশা হারিয়ে ফেলে, নিরুৎসাহিত হয়। আবার অনেক পত্রিকা লেখকদের পুরোপুরি মূল্যায়ন করে। অনেক সময় কেউ কেউ না বুঝে প্রশ্ন করে আপনি কিসের সাংবাদিক? তাদের এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দিতে অনেক সময় লাগে বা মাঝে মধ্যে অনিহা লাগে।

সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন উদ্যোগ বিভিন্ন সময় দেখা যায়। লেখকদের জন্য বেতার, টিভি, পত্রিকা, প্রকাশনায় অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। তবে যদি সব বেতার, টিভি, পত্রিকা, সংবাদ সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকল শাখায় যদি লেখক, কবি, সাহিত্যিক দেন কার্ড ও নিয়মিত সম্মানির ব্যবস্থা করে তা হলে দেশে মনে হয় সৃজনশীল প্রতিভা আরও বেশী উৎসাহিত হবে। এই কথাটি দেশের সকল সাহিত্যিক, কবি, লেখকদের স্বার্থে বলা। লেখালেখি ও সাহিত্যচর্চার পথ আরও সুগম হবে। আরও কারো মধ্য যদি পরস্পর কোন দূরত্ব থাকে তাহলে তা সহজ ভাবে ঘুচে যাবে।

লেখক-নুর মোহাম্মদ, চট্টগ্রাম।