যশোরের শরিফুল আলম বেতার শ্রোতা, এ ছাড়াও তিনি একাধারে সংগঠক, শিক্ষক ও কবি


প্রকাশের সময় : মার্চ ২৭, ২০২৪, ৩:৪০ অপরাহ্ন / ৬২
যশোরের শরিফুল আলম বেতার শ্রোতা, এ ছাড়াও তিনি একাধারে সংগঠক, শিক্ষক ও কবি

এম. জুলফিকার আলী ভুট্টো, বিশেষ প্রতিনিধি-

বেতার শ্রোতা, সংগঠক ও লেখক শরিফুল আলম, পুরো নাম মো. শরিফুল আলম, পিতামৃত-আব্দুর রহমান, মাতামৃত-আয়শা বেগম, পাঁচ ভাই বোনের সবার বড়। বেতার শ্রোতা ও লেখকের জন্ম ৫ আগষ্ট ১৯৭৭ খ্রি. যশোর জেলার সদর উপজেলার ভেকুটিয়া গ্রামে, ভেকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চতুর্থ শ্রেণী থেকে পাশ করে যশোর ক্যান্টনমেন্ট সেনানিবাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন, সেখান থেকে ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর ভেকুটিয়া মুক্তেশ্বরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে ভুর্তি হন এবং এস.এস.সি পর্যন্ত এখানেই লেখাপড়া করেন।

১৯৯৩ সালে এই মুক্তেশ্বরী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে যশোর সরকারি এম.এম কলেজে ভর্তি হন এবং বি. এ পর্যন্ত পড়ার পর সাংসারিক অভাব অনটনের কারণে আর লেখাপড়া সামনের দিকে এগুতে পারেনি। মুলত মুক্তেশ্বরী মাধ্যমিক বিদ্যালেয়ে পড়া কালিন তার কবি প্রতিভার বিকাশ ঘটে। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিলীপ স্যারের সম্পাদনায় বিদ্যালয়ে একটি দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করা হয় সেখানে কবির লেখা মুক্তেশ্বরী কবিতাটি সকলের কাছে প্রসংশিত হয়।

সেদিন দিলীপ স্যার কবির মাথায় হাত রেখে বলে ছিলেন শরিফুল লেখালেখিটা চালু রাখ আমি দোয়া করি তুই একদিন বড় কবি হবে। হয়ত সেই দিলীপ স্যারের দোয়ায় আল্লাহ কবুল করেছেন। নসই থেকে কবি শরিফুল আলম লিখে চলেছেন গান কবিতা নাটক, গল্প, উপন্যাস, বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তার শতাধিক কবিতা গল্প।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে গীতিকার তালিকাভুক্ত হন। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস “আপনের আপন পরের চেয়ে পর” এই উপন্যাসের জন্য তিনি খুলনা গাঙচিল ও কুষ্টিয়া আনন্দধারা পুরষ্কার, আ ফ ম আব্দুর রশিদ ফাউণ্ডেশন পুরষ্কার ও যশোর শিল্পী গোষ্ঠী পুরষ্কার লাভ করেন।

২০১২ সালে প্রকাশিত হয় কবির প্রথম কাব্য গ্রন্থ “মুক্তেশ্বলীর বাঁকে” এবং ২০১৩ সালে গীতিকাব্য “মোহন বাঁশী” প্রকাশিত হয়। ২০০৫ সালে কবি শুরু করেন মঞ্চ অভিনয়। যশোর বিডি হলে যারা জরাকীর্ণ মঞ্চে ময়নার চর নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হন তার পর একাধারে “তোরাপ আলীরা এখন স্বাধীন” “চোরেদের লজ্জা হল” দেওয়ান গাজীর কিচ্ছা, নাটকে অভিনয় করেন।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বন্ধন নাটকে অভিনয় করেন। ২০২১ সালে কবি বেতার নাট্যকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন বাংলাদেশ বেতার বান্দরবান কেন্দ্রে প্রচারিত হয় তার সম্প্রীতির ঈদ নাটকটি, তারপর বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রে প্রচারিত হয় তার নাটক-বৈরীবাতাস, মায়া, একাত্তরের রণাঙ্গন, অবশেষেে এবং একুশ আমার মুক্তির নিশান, কসম বাংলার মাটি। ২০০৩ সালে কবি গঠন করেন গণজাগরণ সাহিত্য পরিষদ, ২০১০ সালে মুক্তেশ্বরী সাহিত্য নিকেতন, ২০১১ সালে মুক্তেশ্বরী সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ।

তিনি এক সাক্ষাৎকারে “ব-দ্বীপ বাংলাদেশ” পত্রিকার সাথে বলেন ২০২৩ সালে গঠন করেন বিবিএল আদর্শ পাঠাগার এবং ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারীতে প্রতিষ্ঠা করেন ভেকুটিয়া রোগী কল্যাণ পরিষদ। তিনি আরও জানান অর্থাভাবে অপ্রকাশিত রয়েছে কবির কাব্য গ্রন্থ-পিজ্ঞীরার প্রেম, বসন্ত বাতাসে উপন্যাস-নিষ্ঠুর বিনোদিয়া, হেনা, মহিয়সী, লাল কন্যা, কালো মেয়ে, জীবন নদীর জোয়ার, একজন মানুষ পেয়েছি, আপন ঘরে কার বসতি। কবি সকলের দোয়া প্রার্থী।

তিনি বেতার শ্রোতাদের নিয়ে গঠন করেন “মুক্তেশ্বরী রেডিও শ্রোতা ক্লাব” মুক্তেশ্বরী রেডিও শ্রোতা ক্লাব, ভেকুটিয়া, যশোরের এই শ্রোতা সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যশোরের গণজাগরণ সাহিত্য পরিষদের। সাহিত্য সম্পাদক যশোর শিল্পী গোষ্ঠী। নির্বাহী সদস্য দ্যোতনা সাহিত্য পরিষদ যশোর। কর্মজীবন-১৯৯৮ সালে ভেকুটিয়া বকুলতলা বাজারে একটি ছোট্ট কাঠের দোকান নিয়ে মুদি ব্যবসা শুরু। পাশাপাশি মেঘনা লাইফ ইনসুরেন্সের লোক বীমা প্রকল্পের মাঠকর্মী হিসাবে যোগদান। ১৯৯৯ সালে বড় ভাইরা মহসিন আলীর কাছে ঘড়ি রেডিও মেরামত কাজে প্রশিক্ষণ। ২০০০ সালে ভেকুটিয়া বকুলতলা বাজারে সেই মুদীখানা দোকান আলম ওয়াচ এণ্ড রেকডিং সেন্টার নামে গান রেকর্ডিংর ব্যবসা।

২০০১ সালে যশোর সাত মাইল বাজারে মিতালী ইলেকট্রনিকস নামে দোকান দিয়ে ব্যবসা। ২০০৩ সালে আর আর এফ এর মাইক্রোক্রেডিট’র চাকরি নিয়ে মেহেরপুর গাংনী অবস্থান করেন। ২০০৪ সালে সিনেট সিগারেট কোং এর সেলসম্যান। ২০০৬ ইকনো ডিষ্টিবিউটার অফিসে সেলসম্যান। ২০০৮ সালে চারটি কোম্পানির ডিষ্টিবিউটার নিয়ে মার্কেটিং ব্যবসা। ২০১০ সালে ভেকুটিয়া বকুলতলা বাজারে চায়ের দোকান দিয়ে কোন রকম সংসার চালায়।

২০১১ সালে পিতার মৃত্যুর পর খুব দুর্বিষহ জীবনের যাপন করতে থাকে। প্রায় দেড় লাখ টাকা দেনা হয়ে। ২০১২ সালের জুন মাসের ১২ তারিখ যশোর দড়াটানা হসপিটাল এণ্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ নাইট ইনচার্জ পদে যোগদান। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়ে বাড়িতে বিশ্রামে থাকেন। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিবিএল আইডিয়াল স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। আজ পর্যন্ত সেখানে সু-নামের সাথে কর্মরত আছেন।