অনেক সময় সময়ের কাছে হার মানতে হয় মানুষকে। জীবনে উথ্থান যেমন আছেন তেমনি পতনও পিছে পিছে ঘোরে। শুধু সময়ের হেরফের মাত্র। নায়িকা বনশ্রী। নব্বইয়ের দশকের অনেকগুলো ব্যবসা সফল ছবির এই নায়িকা আজ পৃথিবী থেকে চলে গেছেন। আজ (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যবরণ করেন। গল্পের মতোই তার জীবন ছিলো আনন্দ ও বিষাদে ভরা। সফলতার গ্পকে ধরে রাখার মতো অবস্থানে তিনি যেতে পারেননি। নানা কারণে তাই তাকে বিদায় নিতে হলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা হিসেবে।
শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সনি রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করছেন। তিনি জানান, চিত্রনায়িকা বনশ্রী বেশকিছু অসুখে ভুগছিলেন। আজ তিনি মারা গেছেন। আজই বাদ আসর তাকে মাদারীপুর দাফন করা হবে।
সনি রহমান বলেন, ‘বনশ্রী আপার ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পেরেছি উনি গত পাঁচদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার হৃদরোগ, কিডনির সমস্যাসহ একাধিক ব্যাধি ছিল। তিনি চলে যাওয়ার আগে অনেক কষ্ট করেছেন। এক সন্তান রেখে গেছেন। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।’
তিনি জানান, আজ বাদ আসর শিবচর পৌরসভা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
শিবচরের মাদবরের চর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে জন্ম তার। বাবা মজিবুর রহমান মজনু শিকদার ও মা সবুরজান রিনার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বনশ্রী বড়। সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি।
১৯৯৪ সালে ‘সোহরাব রুস্তম’ সিনেমা দিয়ে রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে বনশ্রীর। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে ছবিটি ব্যবসা সফল হয়। পরিচিতি পান বনশ্রী। এরপর আরও গোটা দশেক সিনেমায় অভিনয় করেন। নায়ক মান্না, আমিন খান, রুবেলের বিপরীতেও নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন বনশ্রী। রুপালি পর্দার মতো জীবনও হয়ে ওঠে আলো ঝলমল।
তবে খুব বেশিদিন সেই সুখ সয়নি বনশ্রীর কপালে। ১৯৯০-এর শেষে বনশ্রীর আলো-ঝলমল জীবনে ঘটল ছন্দপতন-ছিটকে গেলেন চলচ্চিত্রজগৎ থেকে। এরপর একে একে হারালেন বিত্ত-বৈভব। ঠাঁই হলো বস্তিতে। একসময় তার কাছ থেকে ছিনতাই হলো মেয়ে শ্রাবন্তী। অর্থের অভাবে ছোট ছেলেটিকে রাখলেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সংস্থায়।
শহুরে জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই শেষে তিনি ফিরে এসেছেন নিজ এলাকা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায়। নানান জায়গায় ঘুরে অবশেষে ঠাঁই মিলেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে। ছেলে মেহেদী হাসান রোমিওকে নিয়ে থাকছেন সেখানেই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ টাকার সুদ দিয়ে চলছে তার সংসার।
এ/জে
আপনার মতামত লিখুন :